প্রাত্যহিক জীবনে এসিডের ব্যবহার ও এর সাবধানতা
প্রিয় সম্মানিত পাঠক আপনি যদি এসিডের ব্যবহার ও সাবধানতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। যেহেতু আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানা ধরনের এসিড ব্যবহার করে থাকি। তাই আমাদের এসিডের ব্যবহার ও সাবধানতা সম্পর্কে জানা অবশ্যক।
এছাড়া এই আর্টিকেলের মধ্যে থাকছে এসিডের অপব্যবহার ও আইন কানুন এবং সামাজিক প্রভাব এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন পড়া শুরু করা যাক।
ভূমিকা
আমরা প্রাতাহিক জীবনে এসিডকে নানাভাবে ব্যবহার করে থাকি তার মধ্যে এসিড কে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে দুর্বল এসিড এবং শক্তিশালী এসিড। আবার আমাদের পাকস্থলীতে হাইড্রক্লোরিক এসিড রয়েছে যা আমাদের খাদ্যের হজম করতে সাহায্য করে থাকে।
দৈনন্দিন জীবনে এসিডের দুটি ব্যবহার তুলে ধরা হলো এক ধাতু পরিষ্কার পরিশোধন করতে, সুইমিং পুল রক্ষণাবেক্ষণের এবং গৃহস্থালির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রাত্যহিক জীবনে এসিডের ব্যবহার ও সাবধানতা
আপনার কি জানেন, বোলতা বা বিচ্ছু ফুল ফুটলে প্রচন্ড জ্বালা করে কেন? কারণ হলো বোলতা বা বিচ্ছুর হুলে থাকে এক ধরনের ক্ষারক পদার্থ যার নাম হল হিস্টামীন। তাই এসব ক্ষেত্রে জ্বালা নিবরনের জন্য যে মলম ব্যবহার করা হয়, তাতে থাকে ভিনেগার অথবা বেকিং সোডা যেগুলো এসিড জাতীয়।
ঐগুলো ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে, ফলে বলতা বা বিচ্ছুর হুলের প্রচন্ড জ্বালা আর থাকে না। আবার আমরা প্রায় সবাই সাধারণত মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি, এ ধরনের খাবার খাওয়ার পর কোন ধরনের কোমল পানি পান করি। এটা কি আমাদের কোন কাজে আসে?
আসলে খাবার হজম করার জন্য আমাদের পাকস্থলীতে নির্দিষ্ট মাত্রায় হাইড্রোক্লোরিক এসিডের প্রয়োজন হয়। এই মাত্রর হেরফের হলে আমাদের পরিপাকে অসুবিধা হয়। কোমল পানি গুলো অল্প মাত্রায় এসিডিক, তাই গুরু পাক খাবার খাওয়ার পর কোমল পানিও আমাদের পরিপাকে সাহায্য করে।
লেবু, কমলা, আপেল, পেয়ারা,আমলকি ইত্যাদি নানা রকম ফলের মাঝে আছে নানা রকম জৈব এসিড, যেগুলো আমাদের খুবই প্রয়োজনীয়। আবার কিছু কিছু এসিড আছে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।
যেমন ভিটামিন সি এসকরবিক এসিড। তোমরা কি জানো যে, ভিটামিন সি ক্ষত সারাতে খুবই সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়ে থাকে।
আম, জলপাই ইত্যাদি নানা রকম আচার সংরক্ষণে কি অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় সেটি কি আপনি জানেন? আচার সংরক্ষণের জন্য ভিনেগার বা এসিটিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বিয়ে বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার পর বোরহানি বা দই খেলে কোন লাভ হয় কি? হ্যাঁ অবশ্যই হয়। কোমল পানিয়ের মতো বোরহানি বা দই খেলে এতে বিদ্যমান ল্যাকটিক এসিড হজমের সাহায্য করে থাকে।
আপনি কি জানেন, কেক, বিস্কুট বা পাউরুটি কিভাবে ফোলানো হয়। যদি না জেনে থাকেন তাহলে জেনে নিন। এই কেক বিস্কুট পাউরুটি বেকিং সোডা ব্যবহার করে ফুলানো হয়। বেকিং সোডাকে তাপ দিলে সোডা ভেঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যাতে করে কেক বা পাউরুটি ফুলে ওঠে।
আমরা টয়লেট পরিষ্কার করার জন্য যে সব পরিষ্কারক ব্যবহার করে থাকি তার মূল উপাদান হলো শক্তিশালী, যেমন HCI, HNO3, কিংবা H2SO4 ।
সৌর প্যানেলে তৈরি সৌরবিদ্যুৎ সংরক্ষণের জন্য, বাসা বাড়িতে আইপিএস চালানোর জন্য এবং গাড়িতে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান হল সালফিউরিক এসিড।
ফসল উৎপাদনের জন্য সার হলো অতি প্রয়োজনীয় একটা জিনিস। সার হিসেবে আমরা যেগুলো ব্যবহার করি তার অন্যতম হলো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (NH4NO3), অ্যামোনিয়াম সালফেট ((NH4)2SO4) ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ((NH4)3PO4), আর সার কারখানায় এগুলো তৈরি করা হয় যথাক্রমে নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3), সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) এবং সালফিউরিক এসিড (H3PO4) দিয়ে।
এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম এসিড এর ব্যবহার এখন আমরা আলোচনা করব এসিডের সাবধানতা সমূহ নিয়ে;
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নানা রকমের এসিড। তাই আমাদের জীবনে এসিডের ভূমিকা অপরিসীম এবং অনস্বিকার্য। তবে কিছু কিছু এসিড, বিশেষ করে শক্তিশালী এসিড গুলো যেমন (H2SO4, HNO3, HCI) মানবদেহের জন্য যেমন মারাত্মক ক্ষতিকর, তেমনি আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় এবং নৃত্যব্যবহার্য ও জিনিসপত্রেরও ক্ষতি করে।
আমাদের শরীরে কোথাও লাগলে সে স্থান পুড়ে যায় এবং সেখানে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তোমরা হয়তো এসিড ছুড়লে মানুষের শরীর কিভাবে ঝলসে যায় সেগুলো পত্রিকা বার টেলিভিশনের খবরে দেখেছো।
অন্যদিকে এসির কাপড়ে লাগলে কাপড়ও পুড়ে যায় কিংবা ছিদ্র হয়ে যায়। একইভাবে ধাতব পদার্থ সমূহ এসিডের সংস্পর্শে এলে তাও ক্ষয় হয়ে যায়। তাই এসিডের ব্যবহারে আমাদের খুবই সাবধানে এসিড ব্যবহার করতে হবে। কোন কারণে যদি গায়ে এসিড পড়ে যায় তাহলে সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি দিয়ে সে জায়গাটা ধুয়ে ফেলতে হবে।
এসিডের অপব্যবহার, আইনকানুন ও সামাজিক প্রভাব
পৃথিবীর সকল সমাজেই এক-দুই জন খারাপ নিষ্ঠুর চরিত্রের মানুষ থাকে। যা আমাদের সমাজেও রয়েছে। তারা নিজের প্রতিহিংসা মেটাতে অন্য মানুষের শরীরে এসিড ছুড়ে মারতেও দ্বিধাবোধ করে না। মানুষের শরীরে এসিড ছুড়ে মারার মতো ভয়ংকর অপরাধ করে থাকে।
এসিড ছুড়ে মারার ফলে মানুষের শরীর সম্পূর্ণ ঝলসে যায়। মুখমন্ডলে এসিড ছুড়লে সেটি বিকৃত আকার দরকার ধারণ করে। এ কারণে যারা এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হন, তারা তাদের বিকৃতি চেহারা নিয়ে জনসম্মুখে আসতে চায় না, এমনকি অনেকে এক্ষেত্রে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়, তাদের বেশির ভাগেই স্কুল-কলেজের ছাত্রী বা গৃহবধূ। এসিড সন্ত্রাসের কারণে এই সম্ভাবনাময় ও মেধাবী ছাত্রীদের পড়াশোনা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার গৃহবধুরা এর শিকার হলে পুরো পরিবারের নেমে আসছে দুর্বিষহ জীবন।
তাই আমাদের এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছা হতে হবে। এবং মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে।
এসিড ছুড়লে শাস্তি
কারো ওপর এসিড ছোড়া একটি মারাত্মক অপরাধ। বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী এসিড ছোড়ার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। যে এসিড ছোড়ে, সে একদিকে যেমন অন্যের জীবন দিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে, অন্যদিকে নিজেরও কঠোর শাস্তি হাত থেকে বাঁচাতে পারছে না।
হয়তো বাকি জীবন জেলখানায় বন্দী জীবন কাটাতে হবে। তাই আমাদের সব মানুষকে এসিড ছোড়ার ভয়াবহতার কথা বোঝাতে হবে। যারা সাধারন মানুষের কাছে এত সহজে এসিড বিক্রি করে তাদেরকেও সতর্ক করতে হবে কিংবা শাস্তি দিতে হবে।
একই সাথে কেউ এসিড দিয়ে আক্রান্ত হলে তাকে কিভাবে প্রতিরক্ষা করতে হবে যেমন পানি ফেলতে হবে সে ব্যাপারটিও সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে।
সবচেয়ে বেশি এসিড পাওয়া যায় কোন এসিডে
সকল এসিড মারাত্মক না। তবে কিছু কিছু এসিডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসিড পাওয়া যায় এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত এসিড গুলির মধ্যে পাঁচটি হলো সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড এবং অ্যাসিটিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
এসিডের প্রয়োগ
এসিড সাধারণত বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এটি প্রধানত সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, ব্যাটারি এবং রঞ্জক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, ডিটারজেন্ট এর ব্যবহৃত হয়, সেই সাথে ,অমেধ্য অবসারণের মতে অনেক পণ্য প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সাধারণত এসিড কয়টি
সাধারণভাবে এসিডকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন;
- সালফিউরিক অ্যাসিড;
- হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড;
- নাইট্রিক এসিড;
- ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং
- অ্যাসিটিক অ্যাসিড।
শেষ কথা
প্রিয় সম্মানিত পাঠক এতক্ষণ আমরা আমাদের জীবনের এসিডের ব্যবহার ও সাবধানতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিবেন।
* ধন্যবাদ*
ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url