এসিড বৃষ্টি মানবদেহে কোন রোগ সৃষ্টি করে

প্রিয় সম্মানিত পাঠক হয়তো বা আপনি এসিডের বৃষ্টির ফলে যে রোগগুলো হয়ে থাকে সে সম্পর্কে জানেন না যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকে আমরা এসিড বৃষ্টি মানব দেহের কোন রোগ সৃষ্টি করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এসিড বৃষ্টি মানবদেহে কোন রোগ সৃষ্টি করে
তার সাথে আরো আলোচনা করব এসিড বৃষ্টি হয় কেন?এসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী এসিড কোনটি?এসিড বৃষ্টির PH এর মান কত? এসিড বৃষ্টির ফলাফল, এবং এসিড বৃষ্টি হলে মাটি থেকে কমে যায় কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

ভূমিকা

সাধারণ বৃষ্টিপাতেই এমনিতেই অনেকটা এসিড যুক্ত হয়ে থাকে। তবে যখন বৃষ্টিতে অনেকটা বেশি পরিমাণ এসিড বিদ্যমান থাকে, তখন সেই বৃষ্টিকে থেকে এসিড বৃষ্টি বলা হয়ে থাকে। এসিড বৃষ্টি বা অম্ল বৃষ্টি হলো এক ধরনের বৃষ্টি যেখানে বৃষ্টির পানি অম্লীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে। এটি এমন এক ধরনের বৃষ্টি যে বৃষ্টিতে এসিডের পরিমাণ বেশি থাকে।

বিশ্বায়নের পরে পৃথিবীর খুব দ্রুত উন্নত হচ্ছে। এর ফলে কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। সেইসাথে পরিবেশ দূষণের মাত্রা ভয়ংকর ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্পকারখানা ফলে পরিবেশ দূষণ হয়ে যাচ্ছে ফলে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে এবং এসিড বৃষ্টির পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এসিড বৃষ্টি মানব দেহের কোন রোগ সৃষ্টি করে

এসিড বৃষ্টি মানব স্বাস্থ্যের জন্য নানা ধরনের ক্ষতি করে থাকে। এসিড বৃষ্টির ফলে মানব দেহের যেগুলো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে তা নিচে বর্ণনা করা হলো;
  • মানবদেহের হৃদপিন্ডের সমস্যা করে;
  • ফুসফুসের সমস্যা করে থাকে;
  • অ্যাজমা সমস্যা করে থাকে;
  • ব্রঙ্কাইটিসের মতো মারাত্মক সমস্যা করে থাকে।
এখান প্রশ্ন আসতেই পারে মানুষের কোন রোগটি এসিড বৃষ্টির কারণ হতে পারে? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন রোগটি এসিড বৃষ্টির কারণ। অ্যাজমার সমস্যাটি এসিড বৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী এসিড কোনটি

গাছপালা ময়লা ও আবর্জনা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া এবং কলকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট গ্যাস মেঘের সাথে মিশে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত হয়ে যে অম্লীয় বৃষ্টির পানি সৃষ্টি করে তাকে এসিড বৃষ্টি বলা হয়।

আমরা কি জানি অ্যাসিড বৃষ্টিতে কি কি অ্যাসিড থাকে? নিশ্চয়ই জানিনা তাহলে চলুন জেনে নেই। এসিড বৃষ্টিতে সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিড বেশি থাকে এবং অল্প পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড থাকে।

যেসব এলাকা বা অঞ্চলে শিল্প কলকারখানা বেশি থাকে সেসব অঞ্চলে বায়ু দূষণটাও বেশি হয়ে থাকে ফলে সেইসব স্থানে এসিড বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে এসিড বৃষ্টি হয়ে থাকে। কেবল পৃথিবীতে নয়, শুক্র গ্রহে এসিড বৃষ্টি হওয়ার কথা ও শোনা যায়।

এসিড বৃষ্টি বা অম্ল বৃষ্টি সৃষ্টি প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে। যথা;
  • মানব সৃষ্ট কারণ এবং
  • প্রাকৃতিক কারণ
মানব সৃষ্ট কারণঃ সালফিউরিক এসিড প্রায় বিভিন্ন কলকারখানায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কলকারখানা নিত্য ব্যবহার্য রাসায়নিক বস্তুর মধ্যে সালফিউরিক এসিড অন্যতম। তাই বিভিন্ন কলকারখানা থেকে ধোঁয়ার মাধ্যমে সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে। এই সালফার ডাই অক্সাইড বাতাসে অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয় ফলে সালফার ট্রাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে।

বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা বিশেষ করে কয়লা বা গ্যাস ভিত্তিক এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ইটের ভাটা, যানবাহন, গৃহস্থালি চুলা, ইত্যাদি থেকেও সালফার ডাই অক্সাইড বের হয়, যা এসিডে পরিণত হয় এবং বৃষ্টির পানির সাথে মিশে এসিড বৃষ্টি তৈরি করে।

প্রাকৃতিক কারণঃ প্রাকৃতিক কারণ গুলোর মাঝে রয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, দাবানল, গাছপালার পচন ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস বের হয়, যা পরে বাতাসের অক্সিজেন আর বৃষ্টির পানি একসাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে নাইট্রিক অ্যাসিড এবং সালফিউরিক এসিড তৈরি করে।

প্রাকৃতিক কারণে বজ্রপাত হয়ে থাকে। বজ্রপাতের ফলে উচ্চ তাপমাত্রায় বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়ে থাকে। গ্রীস্মের শুষ্কতার জন্য দাবানলের কারণে বনাঞ্চলে অগ্নুৎপাত ঘটে থাকে। এই অগ্নুৎপাতের ফলে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলের চলে আসে।

ধীরে ধীরে এইসব গ্যাস বায়ুমণ্ডলে জমা হতে থাকে। যে অঞ্চলে এইসব গ্যাসের আধিক্য বেশি থাকে সেইসব এলাকায় মেঘ থেকে বৃষ্টির পানি নামার সময় বায়ুস্তর ভেদ করে নেমে আসে। তখনই শুরু হয় রাসায়নিক বিক্রিয়া। তাই এসব গ্যাসের সাথে বৃষ্টির পানি মিশে তৈরি করে লঘু এসিড এবং তার নেমে আসে পৃথিবীতে বৃষ্টির মাধ্যমে।

এসিড বৃষ্টির PH এর মান কত

বায়ুমন্ডলে অর্ধক্ষেপণ বৃষ্টিতে PH এর মান ৫.৬ এর কম হলে ওই অর্ধক্ষেপণকে এসিড বৃষ্টি বলে। এসিড বৃষ্টির পানি PH এর মান ৫.৬ থেকে ৩.৫ এর মধ্যে থাকে। নানাবিদ অম্ল ধর্মীয় অক্সাইড বা এসিড মিশ্রিত থাকার কারণে এসিড বৃষ্টি সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বৃষ্টির পানির PH এর মাত্রা ৫.৬। স্বচ্ছ বৃষ্টির পানির PH এর মান হল ৫.০ থেকে ৫.৫ এর মধ্যে। আদর্শ এসিড বৃষ্টির PH এর মান ৪.০ হয়ে থাকে।

এসিড বৃষ্টির ফলাফল

এসিড বৃষ্টির ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। এসিড বৃষ্টিতে এসিডের প্রতি সংবেদনশীল অনেক গাছপালা মরে যায়। তাছাড়া কিছু প্রয়োজনে উপাদান যেমন (Ca, Mg ) এসিড বৃষ্টিতে দ্রবীভূত হয়ে মাটি থেকে সরে যায়, যার ফলে ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।এসিড বৃষ্টি বা অম্ল বৃষ্টির কারণে গাছের পাতাগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

এসিড বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়  পানিসম্পদ এবং জলজ প্রাণীগুলো। আমরা জানি, পানিতে এসিড থাকলে PH ৭-এর কম হয়। PH-এর মান ৫-এর কম হলে বেশির ভাগ মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যায়। তখন মাছ উৎপাদনের প্রচুর সমস্যা দেখা দেয়। 

মাছের রেণু বা পোনা এসিডের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এসিডের মাত্রা বেশি হলে পুরো জীব বৈচিত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মানুষের শরীরের জন্যও এসিড বৃষ্টি খুবই ক্ষতিকর। এই এসিড বৃষ্টির জন্য মানুষের রোগ হয়ে থাকছে তার মধ্যে অন্যতম হলো অ্যাজমা।

এসিড বৃষ্টি প্রতিরোধের উপায়

যেহেতু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়, সেহেতু ব্যবহারের আগে কয়লা পরিশোধন করে সালফার ও নাইট্রোজেন মুক্ত করে নিতে হবে। পরিবেশ সচেতন অনেক দেশেই ইতিমধ্যে এই ব্যবস্থা চালু করেছে।পরিবেশ ব্যবস্থাপনা না থাকলে কয়লার পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করা যেতে পারে।

এসিড বৃষ্টি হলে মাটির PH কমে যায় এবং সে ক্ষেত্রে লাইমস্টোন বা চুনপাথর ব্যবহার করে এটি এসিডিটি কমানো যায়।এছাড়া শিল্প-কলকারখানার এবং যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। শিল্প কলকারখানায় দূষণ রোধক পদ্ধতি অবশ্যই বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে।

অতএব, এসিড বৃষ্টি আমাদের জনজীবন এবং জীববৈচিত্র্যর উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে থাকে। আমাদের সুন্দর জীবনকে ব্যাহত করে থাকে। এই এসিড বৃষ্টির কারণে আমরা নানা ধরনের মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি।

পরিশেষে বলা যায় যে,সৌভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে এসিড বৃষ্টি খুব একটা হয় না। যেসব দেশে শিল্প কলকারখানা বেশি দেখা যায় কেবলমাত্র সেই সব দেশেই এসিড বৃষ্টি হয়ে থাকে। পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশে, আমেরিকা, কানাডা, এবং চীনের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে ও তাওয়াইনে ঘন ঘন এসিড বৃষ্টি দেখা যায়।

শেষ কথা

প্রিয় সম্মানিত পাঠক এতক্ষণ আমরা এসিড বৃষ্টির নানা তথ্য সম্পর্কে জানলাম। এই আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এবং আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন।
* ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url