এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে অনেক খোঁজাখুঁজি করছেন কিন্তু কোথাও কোন তথ্য পাননি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সরকারের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করসরকারের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে যদি আপনি সঠিক তথ্য পেতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। তাহলে চলুন পড়া শুরু করা যাক।

ভূমিকা

সরকারের শ্রেণীবিভাগ এরিস্টটলের রাষ্ট্রদর্শনের অন্যতম একটি আলোচিত  বিষয়। এক্ষেত্রে তিনি এক অনবদ্য অবদান রেখেছেন।এরিস্টটলই হলেন প্রথম দার্শনিক যিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'দি পলিটিক্স' (The politics) সরকারের শ্রেণীবিভাগের একটি গ্রহণযোগ্য চিত্র তুলে ধরেন এক্ষেত্রে তিনি সফলতা পরিচয় দিয়েছেন।

তিনি সরকারের শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে বিশ্বে প্রায় দেড় শতাধিক দেশের সংবিধান ও শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছেন

সরকারের শ্রেণীবিভাগ(Classification of Government)

রাষ্ট্রের ক্ষমতা একজন বা কয়েকজনের দ্বারা প্রযুক্ত হতে পারে। এই মতানুসারে এরিস্টটল একজনের শাসন(Rule of one),কয়েকজনের শাসন(Rule of few), বহুজনের শাসন(Rule of Many) দিকে লক্ষ রেখে এই বিভাগের প্রত্যেকটিকে তিনি আবার স্বাভাবিক(Pure form) ও বিকৃতি(Perverted from) দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন
  • স্বাভাবিক রূপজনগণের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে যে সরকার পরিচালিত হয় তাকে স্বাভাবিক রূপ বলে আখ্যায়িত করেছেন
  • বিকৃত রূপ: সরকার যখন জনগণের কল্যাণে পরিচালিত না হয়ে শাসকের ব্যক্তিগত অভিলাষ পূরণের জন্য পরিচালিত হয় তাকে সরকারের বিকৃত রূপ বলা হয়।
এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হলো;

    শাসকের সংখ্যা

সরকারের স্বাভাবিক রূপ

সরকারের বিকৃতির রূপ

    একজনের শাসন

        রাজতন্ত্র

    স্বৈরতন্ত্র

  কয়েকজনের শাসন

        অভিজাতন্ত্র

    ধ্বনিতন্ত্র

    বহুজনের শাসন

        মধ্যতন্ত্র

    গণতন্ত্র


একজনের শাসন(Rule of one):এরিস্টটল তার সরকারের শ্রেণীবিভাগ করতে একজনের  শাসনের অবতারণা করেছেন।তবে একজনের শাসন কে আবার তিনি দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন।
  • রাজতন্ত্রঃ মহৎ উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়ে সরকারের স্বাভাবিক অবস্থায় শাসন ক্ষমতা যদি একজনের হাতে ন্যাস্ত থাকে তবে তাকে রাজতন্ত্র বলে।এতে শাসনকার্য পরিচালিত হয় সমগ্র সমাজের স্বার্থে।
  •  স্বৈরতন্ত্রঃ যে শাসক ন্যায়নীতি ও আইন থেকে বিচ্যুত হয়ে জনগণের উপর অত্যাচার, শোষণ ইত্যাদি চালায় তাকে এরিস্টটল স্বৈরাচারী রাজা বা শাসক বলে অভিহিত করেছেন এবং রাজার শাসনই স্বৈরতন্ত্র বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
কয়েকজনের শাসন(Rule of many): দ্বিতীয় পর্যায়ে এরিস্টটল সরকারের শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে কয়েকজনের শাসনের কথা বলেছেন। তবে কয়েকজনের শাসনকে আবার দুভাগে ভাগ করেছেন।

  • অভিজাতন্ত্রঃ  যদি কতিপয় লোকের হাতে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা ন্যাস্ত থাকে এবং শাসকগণ জনস্বার্থে নিয়োজিত থাকে তাহলে এ ধরনের শাসনব্যবস্থাকে অভিজাতন্ত্র বলে।
  •  ধ্বনিতন্ত্রঃ যদি শাসকগণ তাদের সম্পদের প্রাচুর্যে বদৌলতে তাদের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রাখে এবং সম্পদ আহরণ ও সংরক্ষণ করে তা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করে এবং জনগণের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে তখন তাকে ধনিকতন্ত্র বলে।
বহুজনের শাসন (Rule of Many):সরকারের শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে এরিস্টটল তৃতীয় পর্যায়ে বহুজনের শাসনের কথা বলেছেন। এরিস্টটল বর্ণিত বহুজনের শাসন নিচে আলোচনা করা হলো

  •  মধ্যতন্ত্রঃ যে শাসনব্যবস্থায় শাসনব্যবস্থা বহুজনের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং জনগণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধিত হয় তাকে মধ্যতন্ত্র বা পলিটি  বলা হয়। এরিস্টটলের মতে পলিটি হচ্ছে সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা।  তিনি অবশ্য পলিটি বলতে মধ্যবিত্তদের শাসনকে কল্পনা করেছেন।
  • গণতন্ত্রঃ শাসন ক্ষমতা যদি বহুজনের হাতে ন্যস্ত থেকে শ্রেণিস্বার্থ রক্ষার জন্য পরিচালিত হয় এবং আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মনমতো সরকার পরিচালনা করে, তবে তাকে গণতন্ত্র বলা হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, এরিস্টটল পরবর্তী দার্শনিকদের অনেকে তার সরকারের শ্রেণীবিভাগের সমালোচনা একবারে যুক্তিযুক্ত ছিল সে কথা কোনভাবেই বলা যায় না। কারণ বর্তমান কাল পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সরকারের যেসব শ্রেণীবিভাগ করেছেন তাতে তারা এরিস্টটল শ্রেণীবিভাগকে অস্বীকার করতে পারেন নিন।

বরং অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগকে যুক্তিযুক্ত বলে  বর্ণনা করেছেন। তাই এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগকে যুগোপযোগী বলে অভিহিত করা যায়।

এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগের সমালোচনা

যদিও এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগকে আধুনিককালের সরকারের শ্রেণীবিভাগের ভিত্তি বলে মনে করা হয় তথাপি তা বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে। নিম্নের তা আলোচিত করা হলো;

ক) অস্পষ্টঃ এরিস্টটল রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে যে শ্রেণীবিভাগ করেছেন তা নিতান্তই অস্পষ্ট। তৎকালীন গ্রিসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সঙ্গে তা সংগতিপূর্ণ নয়।

খ) গণতন্ত্র সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাঃ এরিস্টটল গণতন্ত্রকে নিকৃষ্টতম সরকার বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু নানা দোষ ত্রুটি থাকার সত্ত্বেও আধুনিককালে গণতন্ত্রই হচ্ছে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য শাসন ব্যবস্থা।

গ) সর্বভৌম ক্ষমতার ধারণা ভ্রান্তঃ এরিস্টটল শাসনকার্যে নিয়োজিত এক বা একাধিক ব্যক্তিকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলেছেন। কিন্তু আধুনিককালে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আধুনিক কালে জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস।

ঘ) মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়ঃ এরিস্টটল শাসককে সংখ্যা অনুসারে যে শ্রেণীবিভাগ করেছেন তা কোনো মূলনীতির উপর প্রতিষ্টিত নয়।

ঙ) রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য করেননিঃ বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য অত্যন্ত স্পষ্ট। কিন্তু এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগে এই পার্থক্য স্পষ্ট নয়। তিনি সরকার ও রাষ্ট্রের মধ্যে কোন প্রকার সুনির্দিষ্ট পার্থক্য নিরূপণে করতে সক্ষম হননি।

চ) রাজতন্ত্র সম্পর্কে ধারণাঃ এরিস্টটলের মতে, রাজতন্ত্র উৎকৃষ্ট সরকার (Best Form Of Government) তিনি মনে করেন এর মাধ্যমে সার্বজনীন কল্যাণ সাধিত হয়। কিন্তু বর্তমানে বংশানুক্রমিক রাজার শাসন খুব একটা দেখা যায় না। যদিও রাধা শাসন দেখা যায়, কিন্তু তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে।

পলিটি বা মধ্যতন্ত্র  কি

গ্রিক দার্শনিক এরিস্টোটল তাঁর সরকারের শ্রেণীবিভগে পলিটি নামে এক ধরনের সরকার ব্যবস্থার কথা বলেছে। তিনি এই ব্যবস্থাকে সর্বোত্তম সরকার বলে অভিহিত করেছেন। এরিস্টটলের মতে, যে শাসন ব্যবস্থায় দেশের শাসনব্যবস্থা বহুজন ব্যাক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে এবং ওই ব্যক্তিগণ যদি দেশের সামগ্রিক জনগণের কল্যাণে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত করে তবে ব্যবস্থাটিকে পলিটি বা মধ্যতন্ত্র বলে।

সর্বাপেক্ষা বাস্তবভিত্তিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হলো একটি সরকার বা সংবিধানের মিশ্র কাঠামো যেখানে ধ্বনিতন্ত্র ও গণতন্ত্রের উপাদানসমূহের সমন্বিত অংশে প্রধান্য বিরাজ করে। এর সামাজিক ভিত্তি একটি বড় মধ্যবিত্তিক শ্রেণীকে নিয়ে গড়ে ওঠে যারা না খুব ধনী, তা খুব গরিব।

আসলে এরিস্টটলের পলিটি হলো সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের নিয়ে গঠিত এক ধরনের সরকার যেখানে জনগণের সর্বাধিক জনকল্যা সাধন করা হয়ে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।
* ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url