স্বাস্থ্যহীনতা দূর করার উপায়সমূহ সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আপনি কি স্বাস্থ্যহীনতা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানেন। যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কারণ উন্নয়নশীল দেশের প্রায় জনগণ  স্বাস্থ্যহীনতার মত সমস্যায় ভুগতে থাকে।
স্বাস্থ্যহীনতা দূর করার উপায়সমূহ সম্পর্কে জেনে নিন
স্বাস্থ্যহীনতা বলতে শারীরিক মানসিক এবং সামাজিক অসুস্থতাকে বোঝানো হয়। তাই এর কারণ ও সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত  আমাদের জ্ঞান থাকা দরকার। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

ভূমিকা

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে স্বাস্থ্যহীনতা দেখা দিতে পারে। একটি অন্যতম সমস্যা নাম হলো স্বাস্থ্যহীনতা। স্বাস্থ্যহীনতা বলতে বোঝায় অসুস্থতাকে। কেবল রোগ মুক্ত শারীরিক অবস্থাই সুস্বাস্থ্য নয়। স্বাস্থ্যহীনতা বাংলাদেশ ও অনুরূপ অনুন্নত দেশগুলোর জন্য একটি সাধারণ চিত্র। এদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ স্বাস্থ্যহীনতার শিকার।

স্বাস্থ্যহীনতা দূর করার উপায়

স্বাস্থ্যহীনতা একটি অন্যতম সমস্যার নাম। এটা নিজের যেমন সমস্যা আবার আরো অনেকের সমস্যার জন্যও দায়ী। এই কারণে স্বাস্থীনতাকে সমস্যার জনক বলা হয়ে থাকে। তবে স্থানীয় ব্যক্তি পর্যায়ে জাতীয় পর্যায়ে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যহীনতার কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব হবে।

 নিম্নে স্বাস্থ্যহীনতা দূরীকরণের জন্য যেগুলো পদক্ষেপ বেশি ভূমিকা রাখতে পারে সেগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো;

১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণঃ জনসংখ্যার বৃদ্ধি রোধ ব্যতীত স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান আশা করা যায় না। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে কঠোরভাবে নিতে হবে। তাহলেই স্বাস্থ্যহীনতা কিছুটা হলেও দূর হবে।

২. নারী শিক্ষার সম্প্রসারণঃ স্বাস্থ্যহীনতা দূরকরণে নারীর ভূমিকা ও অতুলনীয়। কাজেই নারী শিক্ষার উপর ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কারণ শিশু স্বাস্থ্যের সাথে নারীরা সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষিত নারীরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে অধিক সচেতন। তাই আমাদের দেশের নারীদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাহলে স্বাস্থ্যহীনতা কিছুটা হলেও কমবে।

৩. দেশিয় চিকিৎসা উন্নতকরণঃ দেশি চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন-আয়ুর্বেদিক,কবিরাজি ইউনানী, হেকিমী ইত্যাদি উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৪. দরিদ্র দূরীকরণঃ দেশের স্বাস্থ্যহীনতা দূর করতে হলে, অবশ্যই দরিদ্র দূর করতে হবে। দরিদ্র দূর করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দারিদ্র্যের জন্য মানুষ নিজের পেটের ভাতটাই ঠিক ভাবে জোগাড় করতে পারেনা। সেখানে আবার স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন।

৫. বাস্তবমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নঃ স্বাস্থ্যহীনতা মোকাবেলার জন্য বাস্তব ও কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বাস্তবমুখী ও স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করলে সামান্যতম হলেও স্বাস্থ্যহীনতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

৬. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিঃ দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। চাষ যোগ্য জমিতে একাধিক ও বহুমুখী ফসল উৎপাদনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু ধান উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। ভাতের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টিঃ যে জাতীয় প্রচার মাধ্যমে এবং গ্রামীণ পর্যায়ে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিধি প্রচার করতে হবে। যাতে করে জনগণ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির ফলে স্বাস্থ্যহীনতা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

৮. চিকিৎসার সম্পর্কে সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনঃ আনুষ্ঠানিক এবং সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা সম্পর্কে অজ্ঞতা, কুসংস্কা, ও সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

৯. ভেজাল খাদ্য ও ঔষধ নিয়ন্ত্রণঃ ভেজাল খাদ্য এবং ভেজাল ঔষধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্মী সরকারি পর্যায়ে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্য ভেজালের মাধ্যমে দিন দিন মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের মরণব্যাধি রোগ।

১০.গ্রামমুখী চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলাঃ দেশের প্রচলিত চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা গ্রাম পর্যায় সম্প্রসারিত করা। এবং চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্রামে কাজ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো যদি সঠিকভাবে কার্যকর করা হয় তাহলে দেশে স্বাস্থ্য অধিকাংশ কমে যাবে।  অন্যথায় স্বাস্থ্যহীন জনগণ আরও নানাবিধ সমাজিক সমস্যা তৈরি করবে।

স্বাস্থ্যহীনতা কি

সুস্বাস্থ্যের বিপরীত অবস্থাই হলো স্বাস্থ্যহীনতা। সাধারণ অর্থে স্বাস্থ্যহীনতা বলতে বোঝায় অসুস্থতাকে। যেখানে মানুষ তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা স্বাভাবিক জীবনধারায় অবস্থান করতে ব্যর্থ হয়। স্বাস্থ্যহীনতা বলতে শারীরিক মানসিক এবং সামাজিক অবস্থার অসুস্থতাকে বোঝানো হয়।

স্বাস্থ্যহীনতা হচ্ছে এমন একটি অবস্থা, যা ব্যক্তির সুস্থ স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে। স্বাস্থ্য হীনতার ফলে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অস্বাভাবিক অবস্থা যা তার সামাজিক পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য
বিধানের অক্ষম করে তোলে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আলোকে বলা যায় যে, শারীরিক মানসিক এবং সামাজিক অবস্থার সামঞ্জস্যহীনতাই  স্বাস্থ্যহীনতা । কারণ সুস্থতার সাথে শারীরিক মানসিক এবং সামাজিক অবস্থা অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত।


স্বাস্থ্যহীনতার কারণ ও সমস্যা

তৃতীয় বিশ্বে যতগুলো দরিদ্রতম দেশ রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই দরিদ্রতম দেশে রয়েছে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা। এর মধ্যে স্বাস্থ্যহীনতা একটি, তবে এটা একক কোনো সমস্যা নয়; বরং আরো অনেক সমস্যা উৎস। নানা কারণে এই দেশের স্বাস্থ্য সমস্যা বিরাজমান।

নিচে স্বাস্থ্যহীনতার কারণ ও সমস্যা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো;

১. অধিক জনসংখ্যাঃ বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র জনবহুল দেশ। এর প্রধান সমস্যা হলো অতিরিক্ত জনসংখ্যা। জনসংখ্যা হওয়ার কারণে এই দেশের জনগণের সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। যার ফলে জনগণ স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে।

২. প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণের অভাবঃ একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশের মানুষ এই পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। যার কারণে স্বাস্থ্যহীনতা জীবনের সাথী হয়ে দাঁড়ায়।

৩. পুষ্টিহীনতাঃ স্বাস্থ্যহীনতার কারণ বা সমস্যার মধ্যে পুষ্টিহীনতা অন্যতম। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনসংখ্যার.৯৪ শতাংশ অপুষ্টির শিকার।

৪. দারিদ্র্য ও আর্থিক অসচ্ছলতাঃ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলেও দারিদ্র্য । দারিদ্র্যের কারণে দেশের জনগোষ্ঠীর বিশাল এক অংশ সঠিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ব্যবহার করতে পারেনা। যার কারণে এ দেশের মানুষ স্বাস্থ্যহীনতার শিকার হচ্ছে।

৫. চিকিৎসার সুযোগ সুবিধার অভাবঃ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার তুলনায় মানসম্মত চিকিৎসা ও প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত কম। প্রতিটি জেলা বা উপজেলায় একটি মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যার ওপর প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষকে নির্ভর করতে হয়। সরকারি চিকিৎসার সুবিধা সাধারণ নিম্ন আয়ের লোকের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। কাজেই দরিদ্র লোকেরা চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

৬. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার স্বল্পতাঃ বাংলাদেশে সার্বিকভাবে পাস করা ডাক্তারের সংখ্যা প্রয়োজনে তুলনায় অনেক কম। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব আরো বেশি। এখানে প্রায় ২৮৬০ জন মানুষের জন্য একজন মাত্র রেজিস্টাড ডাক্তার হয়েছেন। এজন্য হাসপাতালগুলোতে আগত রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয় না।

৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ বাংলাদেশে প্রতিবছর কোন না কোন এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়। আর এ দুর্যোগের মধ্যে বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস প্রভুতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে সৃষ্ট মহামারী ও  সংক্রামক ব্যাধি স্বাস্থ্যহীনতার জন্য অনেকাংশে দায়ী।

৮.সামাজিক কুসংস্কারের প্রভাবঃ বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আজও কুসংস্কার তারা প্রভাবিত। আধুনিক চিকিৎসার যুগে সুযোগ-সুবিধান গ্রহণের পরিবর্তে পানি পড়া, তাবিজ প্রভৃতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। সময় মতো চিকিৎসা না করানোর ফলে স্বাস্থ্যহীনতার তীব্র আকার ধারণ করে।

৯. শহর কেন্দ্রিক চিকিৎসার সুবিধাঃ বাংলাদেশের শতকরা 80 ভাগ লোক গ্রামের বাস করা সত্ত্বেও সীমাবদ্ধ চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা প্রায় সবটাই শহরকেন্দ্রিক। বর্তমানেও গ্রামের লোকেরা সঠিকভাবে চিকিৎসা সুযোগ পাচ্ছে না।

১০. বিরতিহীন গর্ভধারণ ও বাল্যবিবাহঃ ২০০৭ সালে  ইউনিসেফ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মেয়েদের গড় বিবাহের বয়স মাত্র ১৬ বছর এবং ২০০৯ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুযায়ী প্রথম সন্তান প্রসবের বয়স ১৮.৫ গড় সন্তান ধারণের হার ৮ জন, সন্তান প্রসবের বিরতি মাত্র ৩৫ মাস। করা ৩০ ভাগ শিশু ন্যূনতম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেনা। এসব কারণে স্বাস্থ্যহীনতার বংশানুক্রমে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক পুরো আর্টিকেল পড়ে কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয় তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
* ধন্যবাদ*



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url