বাংলাদেশের সমাজের উপর নগরায়ণের প্রভাব সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় সম্মানিত পাঠক আপনি যদি বাংলাদেশের সমাজের উপর  নগরায়ণের প্রভাব সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য। আজকে আমরা  এই আর্টিকেলের মাধ্যমে নগরায়ণের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশের সমাজের উপর নগরায়ণের প্রভাব

বাংলাদেশে নগরায়ণের গতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।  সমাজ জীবনের উপর নগরের প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের ওপর নগরায়ণের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে । তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

ভূমিকা

বাংলাদেশের সমাজের ওপর নগরায়ণেরর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। নগরায়ণের প্রভাব সাধারণত দুই দিক দিয়ে বিচার করা হয়। একদিকে যেমন সামাজিক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। অন্যদিকে আবার কিছুটা সামাজিক সমস্যারও সৃষ্টি হচ্ছে।

আমাদের দেশে যে হারে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন হচ্ছে,সে হারে এই দেশের মানুষ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। এরপরে নগরায়ণ এবং শিল্পায়ন আমাদের সমাজ কাঠামোয় তথা সমাজ জীবনে পরিবর্তন সাধন করে থাকে।


বাংলাদেশের সমাজের উপর নগরায়ণের প্রভাব

নগরায়ণ ও শিল্পায়নের সাধারণ প্রভাব নগরায়ন ও শিল্পায়নের বেশ কিছু সাধারণ প্রভাব রয়েছে। নিম্নে সেগুলোর সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো;

বাংলাদেশের নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। এতে করে মানুষের জীবিকার পথ প্রশস্ত হচ্ছে। অধিক জনসংখ্যা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিকল্পিত নগরায়নের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

নগরায়নের ফলে গ্রাম ছেড়ে মানুষ শহরের দিকে স্থানান্তর হচ্ছে। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হলো সমাজ কাঠামো পরিবর্তন। কারণ নগরের মানুষ নানা বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ ও নানামুখী পেশা অবলম্বনে ফলে সমাজের নানা শ্রেণী উদ্ভব ঘটে। যার ফলে সমাজে আসে সামাজিক স্তর বিন্যাস তথা শ্রেণি কাঠামোর পরিবর্তন।

সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো নগরায়ণ ও শিল্পায়নের প্রভাব। কেননা নগরের নানা ধরনের পেশা সুযোগ থাকায় নগরবাসীদের মধ্যে দ্রুত গতিতে অর্থ সামাজিক তথা মর্যাদাগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে মানুষের জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। কেননা, নগরবাসীরা তুলনামূলকভাবে বেশি বাস্তববাদী গণতান্ত্রিক চেতনা এবং ব্যক্তিস্বতন্ত্র বোধের অধিকারী। দেখা যায় যে নগরবাসীর তুলনামূলকভাবে বেশি রাজনৈতিক চেতনার অধিকারী। আবার ধর্ম ও নিরপেক্ষতাও নগরবাসীদের মধ্যে বেশি লক্ষ করা যায়।

নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে সামাজিক সমস্যাঃ নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো;

১. আবাসিক সমস্যাঃনগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বাংলাদেশের নগর সমাজে যতগুলো সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে আবাসিক সমস্যার অন্যতম। নগরের যারা বসবাস করে তাদের অধিকাংশের নিজস্ব বাড়ি নেই। এদের সবাইকে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের কাছে সমস্যাটি চরম সমস্যা হিসেবে বিবেচিত।

আবার নগরের ভাসমান জনগোষ্ঠী রাস্তাঘাটে রাত কাটায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে শহরগুলোতে জনসংখ্যা নানা কারণে আরও বৃদ্ধি পায়। যার ফলে, আবাসিক সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। 

সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন  ধরনের হাউজিং সোসাইটির মাধ্যমে আবাসিক সমস্যার সমাধানের যে প্রয়াস নেওয়া হয়েছে তা একদিকে যেমন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল অন্যদিকে এগুলো নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের অনেকেরই আর্থিক সামর্থ্যর বাহিরে।

২. বেকারত্বঃ নগরায়ণ ও শিল্পায়নের একটি বড় সমস্যা হলো বেকারত্ব। যদিও শিল্পায়িত নগর মূলত বেকার সমস্যার সমাধানে এক বিরাট ভূমিকা পালন করার কথা, তথাপি অনুন্নত বিশ্বের অনেক দেশের কত আমাদের দেশের অবস্থা বিপরীত হয়েছে।

আমাদের দেশে শিল্পায়ন ছাড়াই অনেক ক্ষেত্রে নগরের বিকাশ ঘটেছে। গ্রাম ছেড়ে শহরে জনসংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। এসব জনসংখ্যার প্রায় সব নগরে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ছুটেছে। অথচ আমাদের অল্প শিল্পায়িত ও অশিল্পায়িত নগর গুলো ক্রমবর্ধমান নগরবাসীর কর্মসংস্থানে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

৩. অপরাধঃ নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বাংলাদেশর নগর গুলোতে বয়স্ক ও কিশোর অপরাধ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নগরের পকেটমার থেকে শুরু করে চুরি, ডাকাতি , ছিনতাই ,রাহাজানি
, ধর্ষণ ,খুন প্রভৃতি রকমের অপরাধের খবর পত্র-পত্রিকাগুলো খুললেই পাওয়া যায়।

৪. মাদকাসক্তিঃ পৃথিবীর সব সমাজেই মাদকাসক্তি এক ধরনের সামাজিক সমস্যা যা নানা ধরনের অপরাধের জন্য দায়ী। মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার অবশ্যই দ্বন্দ্বনীয় অপরাধ। বর্তমানে বাংলাদেশের নগর গুলোতে মাদকাসক্ত মারাত্মক রূপ দেখা যাচ্ছে।

মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ এবং এর কেউ হতাশা বা কেউ কৌতূহলবসত এসব নানা ধরনের মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তব্য ব্যক্তি নিজে অস্তিত্ব বিপন্ন করেছে। বিপন্ন করেছে তার পরিবারকে। সর্বোপরি সে নানাবিধ অপরাধ সংঘঠনের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছে এক বড় ধরনের সামাজিক সমস্যা।

৫.সন্ত্রাস ও সংঘাতজনিতঃ নগর জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও সংঘাত নৃত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। প্রতিদিন পত্র-পত্র খুললেই সন্ত্রাস ও সংঘাতের খবর পাওয়া যায়। আর এই গুলোর র অধিকাংশই নগরের। বিশেষ করে শিল্পকারখানায়,যানবাহনে, ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকায় এবং জনাকীর্ণ বা ব্যস্ত রাস্তাঘাটে নানা ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে থাকে।

উন্নয়নশীল দেশের ওপর নগরায়ণের প্রভাব

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিভিন্ন দিক দিয়ে নগরায়ণের প্রভাব লক্ষ করা যায়। তবে উন্নয়নশীল দেশ সমূহের ওপর নগরায়্ণের প্রভাব মূলত দুই দিক থেকে বেশি লক্ষ করা যায়।নগরায়ণের ফলে একদিকে যেমন সাধারণভাবে সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে। অন্যদিকে কতিপয় সামাজিক সমস্যারও সৃষ্টি হচ্ছে।

সীমিত পরিসরে উন্নয়নশীল দেশে শিল্পায়ন হচ্ছে এবং চাহিদা অনুযায়ী প্রকৃত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই নগরায়ণ হচ্ছে।নগরায়ণ ও  শিল্পায়ন উন্নয়নশীল দেশের সমাজ কাঠামোয় তথা সমাজ জীবনে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

নগরায়ণ ও  শিল্পায়নের ফলে একদিকে যেমন সমাজ জীবনে কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ পরিবর্তনে আনে, তেমনি অন্যদিকে কিছু সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। নিম্নে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নগরায়ণের প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো;

১. বস্তির সৃষ্টিঃ অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাপক হারে বস্তি এলাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য যে পরিমাণ আবাসস্থল প্রয়োজন সে পরিমাণ আবাসস্থল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নেই। এমতাবস্থায় দেশের নিম্ন আয়েরের লোকেরা বস্তি এলাকা বৃদ্ধি করে থাকে।

২. বেকারত্ব বৃদ্ধিঃ সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতি কৃষি নির্ভর এবং শিল্প বিকাশে অনগ্রসর। উন্নয়নশীল দেশের লোকদের পর্যাপ্ত পরিমাণ কাজের সুযোগ নেই। ফলে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত অশিক্ষিত দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে পড়ছে এবং নির্লজ্জ ভিক্ষা ভিত্তিতে অংশ নিচ্ছে।

৩. সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধিঃ উন্নয়নশীল দেশে অতি নগরায়নের ফলে সামাজিক বৈষম্য ও অসমতা বৃদ্ধি পায়। কেননা গ্রাম থেকে আগত অশিক্ষিত, দারিদ্র জনগোষ্ঠীর গ্রামকে শোষণ করে উৎপাদন উপায়ে মালিকেরা ক্রমশ ধনী হচ্ছে এবং বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছে। পক্ষান্তরে শ্রমিক শ্রেণী নামমাত্র শ্রমের বিনিময় কাজ করছে এবং মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

৪. শহরের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্টঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যে পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে একটি শহর কর্মসংস্থান, খাদ্য , নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে কর্মে নিয়োজিত রাখতে পারে তার চেয়ে দ্বি দুই বা তিন গুণ এমনকি কোনো কোনো  নগরে ১০ গুন পর্যন্ত লোক বসবাস করছে। এতে করে অধিক জনসংখ্যার সমাবেশ ঘটছে এবং নগরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ব্যর্থ হয়ে সমাজের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

৫.পরিবহন ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততাঃ পরিকল্পনাহীনভাবে নগরায়নের ফলে উন্নয়নশীল বিশ্বের নগর গুলোতে পরিবহনের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনিশ্চয়তা। কারণ প্রয়োজন এর তুলনায় যানবাহন কম থাকায় পরিবহন জনিত সমস্যা দেখা দেয়। সড়ক দুর্ঘটনার নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু লোকের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নগরায়নের যে গতি ও প্রকৃতি তাতে এই সমস্ত দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কেননা, নগরায়নের নামে অতি নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতেই উন্নয়নশীল দেশের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করতে হয়। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থ সামাজিক পরিবর্তনের তেমন কোন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে না।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। যদি লেখার মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি হয় তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
* ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url