ই-কমার্সের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রিয় সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ই-কমার্সের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
ই-কমার্সের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আলোচনা কর
ই-কমার্সের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে ই-কমার্স আসলে কি? ই-কমার্স বলতে কি বুঝায়। সে সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন পড়া শুরু করা যাক।

ভূমিকা

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে E-commerce শব্দটি একটি সুপরিচিত শব্দ। তবে শুরুর দিকে E-commerce-এর চিত্র এমন ছিল না।১৯৭০ সালের দিকে E-commerce-এর প্রাথমিক সূচনা শুরু হয়। ইলেকট্রনিক ডাটা ইন্টারচেঞ্জ ও ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে।

১৯৯০ সালে টিম বার্ণাস লি প্রথম ওয়েব ব্রাউজার www এর ব্যবহার শুরু করেন। একই বছর এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স সিস্টেম ও ডাটা মাইনিং সিস্টেম যুক্ত হলে অনলাইন ব্যবসার পথ সুগম হয়। এতে এয়ার লাইন কোম্পানিগুলো রিজার্ভেশনে অনলাইন টিকেট সিস্টেম চালু করতে পারেন।

১৯৯২ সালে বুকস ডট কম নামে প্রথম E-commerce  শুরু করে অনলাইনে পেমেন্ট প্রসেসিং ব্যবহার করে। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে মুন্সি জি ডট কম নামে একটি ই-কমার্স সাইট চালু হয়।    

ই-কমার্সের সংজ্ঞা 

E-commerce বলতে বোঝায় Electronic commerce । এটি ব্যবসায়ের আধুনিক পদ্ধতি, যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন ও সুবিধা ব্যবহার করা হয়। আধুনিক ডাটা প্রসেসিং এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বিশেষ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য ও সেবা মার্কেটিং, বিক্রয়, ডেলিভারি, ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি করার ইচ্ছে ই-কমার্স।

যেমন অনলাইন শপিং, ইলেকট্রনিক প্রেমেন্ট , অনলাইন নিলাম ই-ব্যাংকিং, অনলাইন টিকেটিং ইত্যাদি সবকিছুই কমার্স এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এটির মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি যেমন-ব্যক্তিগত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি ব্যবহার করে ওয়েব ও ইলেকট্রনিক ডাটা আদান প্রদানের মাধ্যমে সকল প্রকারের পণ্য ও সেবা ক্রয় বিক্রয় করা হয়ে থাকে।

যেমন ধরুন আপনি ভালো ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন। এখন আপনি একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে একটি ভালো নাম দিয়ে কন্টেন্টের ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সাইটে উপস্থাপন করতে পারেন।

কিছু ক্ষেত্রে কন্টেন্টের ডেমো ভার্সন কনজিউমারদের জন্য ফ্রিতে দেখানোর ব্যবস্থা রাখতে পারেন এবং ডাউনলোডেরও ব্যবস্থা রাখতে পারেন। এরপর কনজিউমাররা তাদের চাহিদা মাফিক কন্টেন্ট আপনার মাধ্যমে বানিয়ে নিতে আপনাকে প্রস্তাব দিবে।

আপনি অনলাইনের সহযোগিতায় কনজিউমারের সাথে বিস্তারিত কথা বলে তাম নির্ধারণ করে তাদের কন্টেন্ট ডেলিভারি দিতে পারেন এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম এর মাধ্যমে আপনি আপনার পাওনাটুকু বুঝিয়ে নিতে পারেন।

ক্রমবিকাশমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকরণের কারণে ই-কমার্সে পরিধি এবং জনপ্রিয়তা দিন দিন বিশ্বব্যাপী বেড়েই চলেছে।

ই-কমার্সের সুবিধা সমূহ

ই-কমার্স কোনো প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে সাহায্য করে থাকে। ই-কমার্সের মাধ্যমে যে কোনো পণ্য দ্রুত ক্ষয় এবং বিক্রয় করা যায়। যেকোনো জিনিসপত্র সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যবসা পরিচালনার খরচ কমায়। এবং আর্থিক লেনদেনের ও খরচ কম হয়।

ই-কমার্সের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন খরচাদি যেমন-তৈরি করা, বিতরণ করা, সংরক্ষণ করা ইত্যাদি কার্যক্রমের খরচ ব্যাপকভাবে। ই-কমার্স অতি দ্রুত ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে দেয় ফলে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ই-কমার্সের মাধ্যমে ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সহজেই ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়।


ই-কমার্স ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহ পরস্পরের ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতি, সার্ভিস এবং মূল্য সম্বন্ধে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজে জানতে পারে। এর ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাঝে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। ই-কমার্স স্বল্প সময়ের মধ্যে বাজার যাচাই এর সুবিধা দেয় এবং তাৎক্ষণিক অর্ডারের সুবিধাও
দিয়ে থাকে।

ই-কমার্সের সুবিধাসমূহকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-

  • সংস্থার সুবিধা
  • ক্রেতার সুবিধা এবং 
  • সামাজিক সুবিধা
সংস্থার সুবিধাঃ

১. ই-কমার্স ব্যবহার করে সংস্থাগুলো তাদের বাজারকে নূন্যতম মূলধন বিনিয়োগের মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রসারিত করতে পারে। একটি সংস্থা সহজেই বিশ্ব জুড়ে আরো বেশি গ্রাহক, সেবা সরবরাহকারী ও উপযুক্ত ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব সনাক্ত করতে পারে।

২.  ই-কমার্স সংস্থাগুলো তথ্য ডিজিটালাইজেশন করে প্রক্রিয়া তৈরি, বিতরণ, পুনরুদ্ধার এবং পরিচালনা করার জন্য কাগজ ভিত্তিক তথ্য ব্যয় হ্রাস করতে সহযোগিতা করে।

৩. ই-কমার্স কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

৪.  ই-কমার্স সংস্থাকে ভালো কাস্টমার সার্ভিস প্রদানের সাহায্য করে থাকে।

৫. ব্যবসায়িক প্রসেসকে সহজ, ও উপযোগী করে তোলে।

৬. পেপার ওয়ার্ক এর কাজ কমিয়ে ফেলে।

৭. ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে থাকে। এবং এটি আকর্ষিত সরবরাহ ব্যবস্থাকে সমর্থন করে থাকে।

ক্রেতার সুবিধাঃ

১. এটি সাপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা ক্রেতা কে সুবিধা দিয়ে থাকে।

২. বিভিন্ন প্রকারের অপশন বাছাই করার সুযোগ প্রদান করে থাকে। এবং দ্রুত পণ্য ডেলিভারি করে থাকে।

৩. এটি কাস্টমারকে বিভিন্ন জিনিসকে তুলনা করতে সহজলভ্য করে এবং মানসম্মত পণ্য কিনতে সাহায্য করে।

৪.কোনো গ্রাহক একটি পণ্য সম্পর্কে পর্যালোচনা, মন্তব্য করতে পারেন এবং অন্যরা কি কিনে তা দেখার পরে বা চূড়ান্ত ক্রয় করার আগে অন্যান্য গ্রাহকদের পর্যালোচনা মন্তব্য দেখতে পারেন।

৫. ভার্চুয়াল নিলামের মাধ্যমে ক্রেতারা উপকৃত হতে পারে।

৬. এটি সহজেই উপলভ্য তথ্য সরবরাহ করে। কোন গ্রাহক দিন বা সপ্তাহের জন্য অপেক্ষানা করে সেকেন্ডের মধ্যে প্রাসঙ্গিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারেন।

৭. ই-কমার্স সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ায় এবং ফলস্বরূপ সংস্থাগুলো গ্রাহকদের জন্য যথেষ্ট ছাড় প্রদান করে থাকে।

সামাজিক সুবিধাঃ

১. গ্রাহকদের কোনো পণ্য কেনার জন্য ভ্রমণ করতে হয় না, এতে করে রাস্তায়, কম ট্রাফিক এবং কম বায়ু দূষণ হয়।

২. ই-কমার্স পণ্যের ব্যয় হ্রাস করতে সহায়তা করে। তাই কম ধনী লোকদের জন্য বাজার উন্মুক্ত থাকে।

৩. ই কমার্স গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে পরিষেবা ও পণ্য গুলো অ্যাক্রেস করতে সক্ষম করেছে, না হলে তাদের কাছে উপলভ্য হতো না।

৪. ই-কমার্স সরকারকে জনসেবা যেমন-স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, সামাজিক পরিষেবা গুলো স্বল্পব্যয়ে ও উন্নত পদ্ধতিতে সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

ই-কমার্সের অসুবিধা 

ই-কমার্সের যেমন সুবিধা রয়েছে, সুবিধার পাশাপাশি তেমনি রয়েছে অসুবিধা। তাই ই-কমার্সের অসুবিধা গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো;

১. ই-কমার্সের অসুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো দক্ষ লোকবল এর অভাব।

২. উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগে ব্যয়বহুল।

৩. দূরবর্তী স্থানের অর্ডার ক্ষেত্রবিশেষ ব্যয়বহুল।

৪. আর্থিক লেনদেনে নিরাপত্তার অভাব।

৫. ক্রেতা বা বিক্রেতা অনেক সময় ই-কমার্সের কার্যক্রমের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না।

৬. ই-কমার্সের জন্য অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক খরচাদি বেশি হয়ে থাকে এবং অভিজ্ঞতার অভাবে পণ্য  ও সেবা পেতে দেরি হয়।

৭. প্রারম্ভিক খরচরে বেশি হয়ে থাকে।

৮. একজন ব্যবহারকারী অজানা বিক্রেতার উপর নির্ভর করে পণ্য ক্রয় করতে হয়।

৯. এর মাধ্যমে পণ্য সমূহ নিজে সরাসরি দর্শনের মাধ্যমে ক্রয় করতে পারে না।

১০. এক্ষেত্রে অনলাইনে গ্যারান্টি ও নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন হয়ে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় সম্মানিত পাঠক আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিবেন।
* ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url