বরেন্দ্র জনপদ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিন

 বরেন্দ্র জনপদ সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের জানাতে চলেছি। যদি আপনারা বরেন্দ্র জনপদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তাহলে এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

বরেন্দ্র জনপদ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিন

 বরেন্দ্রভূমি কত বর্গ কিলোমিটারর মধ্যে অবস্থিত? বরেন্দ্র অঞ্চল কোথায় অবস্থিত? বরেন্দ্রভূমি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।চলুন তাহলে পড়া শুরু করা যাক।

ভূমিকা

বর্তমান কালের ন্যায় বাংলা একক কোনো অংশে ভক্ত ছিল না। বাংলা ছিল আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত। এই আলাদা ভাগকে বলা হতো জনপদ। প্রাচীন বাংলার যে কয়টি জনপদ ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল বরেন্দ্র জনপদ।

বরেন্দ্র জনপদ সম্পর্কে

বরেন্দ্র জনপদ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। নিম্নে বরেন্দ্র জনপদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো;

বরেন্দ্র উত্তরবঙ্গের একটি প্রাচীনতম জনপদ। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মোঘল সম্রাট আকবরের সময় সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এই সময় শাহজাদা মুহাম্মদ সুজার (১৬৩১-৫৯ খ্রি.) বেশ কিছু কীর্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জে রয়েছে। 

তারা কাছারী বাড়ি ধ্বংসাবশেষ রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুরে। তার সময় গৌড়ের পূর্বাঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য হযরত শাহ নেয়ামতুল্লাহ গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে ফিরোজপুরে স্থায়ীভাবে  আস্থানা স্থাপন করেন ।

সম্রাট আওরঙ্গযেবের (১৬৫৮-১৭০৭ খ্রি.) পর থেকে মুঘল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়লে, বাংলার নবাবরা প্রায় স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন। নবাব মুর্শিদকুলি খানের (১৭১৭-১৭২৭ খ্রি.) সময় বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে স্থানান্তর করে মুর্শিদাবাদের নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় বরেন্দ্র অঞ্চল বাংলার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পরিণত হয়।

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশী নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে বাংলার ইংরেজ উপনিবেশিক শাসনের বীজ রোপিত হয়। ধীরে ধীরে কলকাতা কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার কারণে বরেন্দ্র এলাকা কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার অন্যতম জনপদ ছিল বরেন্দ্র। অনেক ইতিহাসবেত্তা মনে করেন ছিল পুন্ড্র রাজ্যের একটি অংশবিশেষ। ভারতীয় সাহিত্য ও বিভিন্ন শিলালিপি থেকে যারা যায় যে, আধুনিক রাজশাহী দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার অধিকাংশই এই বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল। বাংলার পাল শাসনের আমলে গৌরবের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে।

বরেন্দ্রভূমির আয়তন কত

বরেন্দ্র প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে প্রাচীনতম অঞ্চল। এই বরেন্দ্রভূমি রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৯৩২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে। প্লাবন সমভূমি থেকে এর উচ্চতা ৬ থেকে ১২ মিটার। বঙ্গ অববাহিকায় এটি সর্ববৃহৎ প্লাইস্টোসিন যুগের উচ্চভূমি।

 বরেন্দ্র অঞ্চল কোথায় অবস্থিত

বরেন্দ্র উত্তরবঙ্গের একটি প্রাচীন জনপদ। ঐতিহাসিকদের মতে বর্তমান রাজশাহী , চাঁপাইনবাবগঞ্জ , নওগাঁ ,নাটোর, বগুড়া, রংপুর ,দিনাজপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ এর কিছু অংশ এবং দার্জিলিং ও কোচবিহার সহ গঠিত সমগ্র এলাকাকে বরেন্দ্র অঞ্চল বলা হয়।

সন্ধ্যাকর নন্দীর 'রামরচিত-কাব্য'-এ গঙ্গা ও করতোয়া নদীর মধ্যভাগকে বরেন্দ্র নামে অভিহিত করা হয়েছে।আ. কা. ম,যাকারিয়া কর্তৃক সম্পাদিত বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস নামক পুস্তককে সমগ্র রাজশাহী বিভাগকেই বরেন্দ্র অঞ্চল নামে অভিহিত করা হয়েছে।

এই বিচারে উত্তম দিনাজপুর , মালদহ , রংপুর ,বগুড়া , পাবনা এবং বৃহত্তম রাজশাহী জেলা বরেন্দ্র ভূমির ভিতরে ধরা হয়ে থাকে।এই হিসেবে এর আয়তন ১৩,৩৬৯ বর্গমাইল বা ৩৪,৬৫৪ বর্গ কিলোমিটার।

বঙ্গ অববাহিকায় এটি সর্ববৃহৎপ্লাইস্টোসিন যুগের উচ্চভূমি । এই এলাকার ভূমি অসমতার এবং মাটির লাল ও কাকরময়। এটি পশ্চিমে মহানন্দা ও পূর্বে করোতোয়া নদীর ধারা বেষ্টিত। গভীর খাতবিশিষ্ট আঁকাবাঁকা ছোট ছোট কয়েকটি স্রোতঃস্বিনী এ অঞ্চলে রয়েছে।

এইসব স্রোতঃস্বিনী খড়ি নামে পরিচিত। বরেন্দ্র পূর্ণ অঞ্চল  পূর্ণভবন, আত্রাই ও যমুনা নদী দ্বারা চারটি অংশে বিভক্ত। এর পূর্ব দিকের তিনটি অংশ বাংলাদেশের অন্তর্গত। মহানন্দা ও পূর্ণভবন মধ্যবর্তী অপুর অংশটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জেলায় অন্তর্গত। 

বরেন্দ্র অঞ্চল কৃষি কাজের জন্য উপযোগী। ধান এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। ধান অন্য অঞ্চলে তুলনায় এই অঞ্চলে বেশি জন্মে। এছাড়াও যেসব কৃষি পণ্য এখানে উৎপন্ন হয় তাদের মধ্যে অন্যতম হলো পাট , ভুট্টা ,পান  ইত্যাদি। বরেন্দ্র অঞ্চলের একটি অর্থকারী ফসলের নাম হল আম।

বরেন্দ্রভূমি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে

  • বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির  ক্ষয়ের মাধ্যমে;
  • বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে;
  • ভূ-আলোড়নের সময় ভূপৃষ্ঠের সংকোচন ও সম্প্রসারণ এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে;
  • ভূ-গর্ভের গলিত শিলা উঁচু হয়ে জমাট বাধার মাধ্যমে এ বরেন্দ্রভূমি সৃষ্টি হয়েছে;
  • প্লাইস্টোসিনকালের আন্তঃবরফ গলা পানিতে প্লাবিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে।

বরেন্দ্রভূমির মৃত্তিকা লালচে বর্ণের হয় কেন

বরেন্দ্র ভূমির মৃত্তিকার রং লাল রঙের। সাধারণত মাটির সঙ্গে ফেরিক অক্সাইড থাকলে মাটির রং লাল হয়। যেহেতু বরেন্দ্র এলাকার মাটির রং লাল সেহেতু এই অঞ্চলে মাটির সঙ্গে ফেরিক অক্সাইডের  পরিমাণ বেশি হয়েছে। এই অঞ্চলের মাটি লাল এবং কাকরময়।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।
* ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url