বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান আলোচনা কর

 বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে আজকে আমরা জানাতে চলেছি। আপনারা যদি বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান

আরো আলোচনা করা হবে বাংলাদেশের বাংলাদেশের সীমারেখা, বাংলাদেশের আয়তন সম্পর্কে। যদি আপনি এই সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে চান তাহলে এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন পড়া শুরু করা যাক।

ভূমিকা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে রয়েছে সুদীর্ঘকালের গৌরবময় ইতিহাস ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট একটি স্থান দখল করে আছে বাংলাদেশ। এদেশের ভৌগোলিক অবস্থান আর ভূ-প্রাকৃতিতে রয়েছে এক নিজস্ব স্বকীয় সত্তা। সুদীর্ঘকাল ধরে ভূখণ্ডে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করে আসছে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান

বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। ২০°৩৪' উত্তর অক্ষরেখা থেকে২৬°৩৮' উত্তর অক্ষাংশ এবং৮৮°০১' থেকে ৯২°৪১' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিস্তৃতি। বাংলাদেশের মধ্যভাগ দিয়ে অতিক্রম করেছে কর্কটক্রান্তি রেখা।

বাংলাদেশের তিন দিকে স্থল এবং একদিকে জল দ্বারা বেষ্টিত। বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম অবস্থিত। এবং পূর্বে ভারতে আসাম , ত্রিপুরা রাজ্য ও মিজোরাম অবস্থিত। এছাড়া পূর্ব দিকে মিয়ানমার রয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত। বাংলার অবস্থান সম্পর্কে নীহার রঞ্জন রায় তার বাংলা সনেট গ্রন্থে উল্লেখ বাংলার একদিকে উচ্চ পর্বত, দুই দিকে কঠিন শৈলভূমি আর এক দিকে বিশাল সমুদ্রর মাঝখানে সমভূমি।

বাংলাদেশের সীমারেখা

বাংলাদেশের সর্বমোট সীমান্ত দৈর্ঘ্য ৫১৩৮ কিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট স্থল সীমা ৪,৪২৭ কিলোমিটার । এর মধ্যে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমারেখা দৈর্ঘ্য ৪১৪৪ কিলোমিটার। বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমার সীমারেখা দৈর্ঘ্য ২৮৩ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের দৈর্ঘ্য ৭১১ কিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট সমুদ্রসীমা ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিলোমিটার।

বাংলাদেশের আয়তন

বিশ্বে আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৫ তম। বাংলাদেশের মোট আয়তনের মধ্যে নদ-নদী অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৯ হাজার ৩৮০ বর্গ কিলোমিটার। বনাঞ্চলের আয়তন ২২ হাজার ৫৮৪ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট আয়তন ১,৪৭,৬১০ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল।

এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল। বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত বাংলাবান্ধা। আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা নারায়ণগঞ্জ । বাংলাদেশের মোট আয়তনের শতকরা ১৬% বনাঞ্চল।

প্রান্তীয় অবস্থান

সমুদ্র হতে দূরত্ব এবং সমুদ্রের অবস্থান অনুসারে বিভিন্ন দেশের অবস্থান মহাদেশীয় প্রান্তীয় , উপদ্বীপীয়
হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অবস্থার প্রান্তীয়। বাংলাদেশের উপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। এই রূপ অবস্থানের জন্য এর দক্ষিণে ভগ্ন উপকূলে সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠেছে। এর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সুলভ জলপথে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে।

ভূ-প্রাকৃতির বৈশিষ্ট্য

বিশ্বের যতগুলো বদ্বীপ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ পৃথিবীর একক এবং বৃহত্তম ব-দ্বীপ।পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। নদী উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে একযোগে এ সুবিশাল ব-দ্বীপ সৃষ্টি করেছে।

সীমিত উচ্চভূমি ছাড়ার সমগ্র দেশ এক বিস্তীর্ণ সমভূমি এদেশের ভূখণ্ড উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢালু। ফলে প্রবাহিত সব নদ নদী এবং এদের উপনদী শাখা নদী গুলো উত্তর দিক হতে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর অভিমুখে প্রবাহিত হয়েছে।

ভূমির পার্থক্য ও গঠনের দিক বিবেচনা করে এদেশের ভূমিরূপ কে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।যেমন;
  • টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ 
  • প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ বা চত্বর ভূমি
  • সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি।

জনসংখ্যা

অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮২ লাখ। নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০০ঃ১০০.২। ইসলাম ধর্ম অনুসারী ৮৮. ৩% , হিন্দু ১০.৫% , বৌদ্ধ ০.৬% , খ্রিস্টান ০.৩%। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্বে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১৪০ জন লোক বসবাস করে। বিশ্বে জনসংখ্যা দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ তম। এ দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭%।

বাংলাদেশের মহিলা ও পুরুষদের গড় আয়ু ৭২. ৩ বছর। জাতিগতভাবে বাংলাদেশের মানুষ ৯৮% বাঙালি। বাকি ২% মানুষ বিহারী বংশগত। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩ টি উপজাতি রয়েছে। এই উপজাতি গুলোর মধ্যে চাকমা উপজাতি উল্লেখযোগ্য ।

 পার্বত্য চট্টগ্রামের বাহিরেও  উপজাতিরা বসবাস করে এদের মধ্যে গারো ও সাঁওতাল অন্যতম। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২১.৪% লোক শহরে বসবাস করে। বাকি ৭৬.৬% জনগোষ্ঠী গ্রামে বসবাস করে। 

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ

বর্তমানে বাংলাদেশের ৭০০ এর বেশি নদ-নদী রয়েছে। বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। বাংলাদেশে নদীর জলের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ টি নদী আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের নদীর মোট দৈর্ঘ্য হল প্রায় ২২,১৫৫ কিলোমিটার।

 পদ্মাকে বাংলাদেশের প্রধান নদী বলা হয়। বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক নদী একটি তাহলো পদ্মা। বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে আত্রাই নদী। বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভক্ত করেছে হারিয়াভাঙ্গা নদী। এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে নাফ নদীর দ্বারা বিভক্ত করা হয়েছে।

হাড়িয়াভাঙ্গার মোহনায় অবস্থিত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ ভারতে নাম পূর্বাশা এই দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, পৃথিবীর মানচিত্রের ছোট্ট একটি স্থান দখল করে আছে বাংলাদেশ। এদেশের ভৌগোলিক অবস্থান আর ভূ-প্রাকৃতিতে রয়েছে একটি নিজস্ব সত্তা। যা সুদীর্ঘকাল ধরে ভূখণ্ডে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করে আসছে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিবেন।
* ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url