সংস্কৃতি কি? সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

প্রিয় সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সংস্কৃতি কি সে সম্পর্কে জানাতে চলেছি। যদি আপনি সংস্কৃতি কি? সংস্কৃতি সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
সংস্কৃতি কি? সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
সংস্কৃতি কি এ সম্পর্কে তো আলোচনা করবই। তার সাথে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন পড়া শুরু করা যাক।

ভূমিকা

মানবসৃষ্ট সবকিছু সমষ্টি হলো সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানুষ ও জাতির পরিচয় বহন করে। মানুষের জীবনে সাংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে অনেক। সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের জীবনযাপন বৈচিত্র্যময় সুন্দর এবং মর্জিত হয়। মানুষ তার প্রয়োজনে যা কিছু আবিষ্কার করে ও জ্ঞানের সংযোজন ঘটায় তার সবকিছুই সংস্কৃতির অংশ।

সংস্কৃতি কি?

সংস্কৃতি হলো আয়নার মতো। আয়নার সামনে দাঁড়ালে যেমন নিজের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়, তেমনি সংস্কৃতি মাধ্যমে একটি জাতির পরিচয় ফুটে ওঠে। সংস্কৃতি মাধ্যমে মানুষের অতীত, বর্তমান জীবন যাত্রা প্রণালী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। সভ্যতার সৃষ্টি ও বিকাশে সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মানব জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তুলতে সাংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। তাই কোন সমাজে সংস্কৃতি বলতে ওই সমাজের জীবনযাত্রা প্রণালীকে বোঝায়।

সংস্কৃতি ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Culture . এটি ল্যাটিন শব্দ Culture থেকে উদ্ভব। যার অর্থ কৃষ্টি।কৃষ্টি শব্দটি আবার চর্চা অর্থে ব্যবহৃত হয়।Culture শব্দটি ষোলো শতকের ফ্রান্সিস বেকন প্রথম ব্যবহার করেন।

সাধারণভাবে সংস্কৃতি বলতে মানুষের জীবনাচারণকে বুঝায়। আবার মানুষ তার অস্তিত্বের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে যা কিছু সৃষ্টি করেছে তাই হচ্ছে সংস্কৃতি।

সমাজবিজ্ঞানী ও নৃ-বিজ্ঞানীগণ সংস্কৃতি বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো;

সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার-এর মতে, আমরা মানুষ হিসেবে কি, সে হলো আমাদের সংস্কৃতি।

সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস-এর মতে, অর্থনৈতিক ভিত্তির বিশেষ কাঠামোই হচ্ছে সংস্কৃতি।

সমাজবিজ্ঞানী জোনস-এর মতে, মানুষ সৃষ্ট সবকিছু সমাধি হলেও সংস্কৃতি।

নৃ-বিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কি-এর মতে, সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের আপন কর্মের সৃষ্টি, যার মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য সাধন হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, সংস্কৃতি মানব জাতির পরিচয় বহন করে। সংস্কৃতি মানুষের সামাজিক আবরণের সমষ্টি। মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা কিছু করে তাই তার সংস্কৃতির অংশ। আদিম যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত সভ্যতার সৃষ্টি বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

মানুষের কথা ,বার্তা , চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছেদ, ভাষা-শিল্প কলা, সাহিত্য সহ সবকিছুই সংস্কৃতির অংশ। মানব জীবনে সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ

সংস্কৃতি হলো জীবন প্রণালী। সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের জীবন প্রণালীর পরিচয় ফুটে ওঠে। নিম্নের সংস্কৃতি বৈশিষ্ট্য সমূহ বর্ণনা করা হলো;

১ সংস্কৃতি শিক্ষনীয় বিষয়ঃ সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি শিক্ষনীয় বিষয়। এটি জৈবিক বংশগতির মাধ্যমে আসে । এটি সমাজ থেকে শিখতে হয়। বিভিন্ন পরিস্থিতি থেকে মানুষ সংস্কৃতি শিক্ষা লাভ করে থাকে।

২ সংস্কৃতি মানবসৃষ্টঃ সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মানব সৃষ্ট । মানুষ তার প্রয়োজনে যা কিছু সৃষ্টি করে তাই তার সংস্কৃতি। মানুষ সৃষ্ট সব বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদানই হলো সংস্কৃতি। মানুষ তার প্রয়োজন বিভিন্ন উপাদান সৃষ্টি করে থাকে।

৩ সংস্কৃতি হলো সামাজিকঃ সংস্কৃতি হলো সামাজিক বিষয়। এটি সামাজিক সম্পর্কে মাধ্যমে বিকাশিত হয়। মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ সমাজবদ্ধ ভাবে সমাজে বসবাস করে। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত হয়। এইসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কৃতির উদ্ভব হয়।

৪ সংস্কৃতি অংশীদারিত্বমূলকঃসংস্কৃতির আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো সংস্কৃতি অংশীদারিত্বমূলক, সংস্কৃতি কারো ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য নয়। এটি সবার অংশগ্রহণের ফলে সৃষ্টি হয়। যেমন প্রথা , ঐতিহ্য, বিশ্বাস , ধারণা ও নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামাজিক ও গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক।

৫ উদ্দেশ্য সাধনের উপায়ঃ সংস্কৃতি অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক বিষয়। মানুষ তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যেসব কলাকৌশল উদ্ভাবন করেন তাই তার সংস্কৃতির অংশ। উদ্দেশ্যহীন কোন বিষয় সাংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনা। মানুষ তার জীবন প্রণালী পরিচালনার জন্য যা কিছু করে তাই তার সংস্কৃতি।


৬ সংস্কৃতি সমাজভেদে ভিন্নঃ সংস্কৃতি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি সমাজ্ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন সমাজে মানুষের আচার-আচরণ ভিন্ন হয়। তাদের জীবনধারা আলাদা হয়। উদাহরণস্বরূপ মুসলমান , হিন্দু , চাকমা ইত্যাদি গোষ্ঠীর সংস্কৃতি আলাদা।

৭ হস্তান্তরযোগ্যঃ সংস্কৃতির অন্যতম একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সংস্কৃতি হস্তান্তরযোগ্য। প্রকৃতি এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়। অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি শিক্ষা দেয়। এর ফলে সংস্কৃতি প্রজন্ম হতে প্রজন্ম বিস্তার লাভ করে।

৮ পরিবর্তনশীলতাঃ সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পরিবর্তনশীলতা। সমাজ যেহেতু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে সেহেতু সংস্কৃতি সমাজের সাথেই পরিবর্তন হচ্ছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে আদিম সংস্কৃতি পরিবর্তন হচ্ছে । মানুষের জীবনধারা ও আচার-আচরণ ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে । তাই বলা যায় সংস্কৃতি পরিবর্তনশীলতা।

৯ বিভাজনযোগ্যঃ সংস্কৃতি হলো বিভাজনযোগ্য। সংস্কৃতি এখন কোন বিষয় নয়। মানুষের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সংস্কৃতির অংশ। স্থান , কাল , পাত্রভেদে এই বিভাজন লক্ষ করা যায়।

১০ কাঠামোভিত্তিকঃ সংস্কৃতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংস্কৃতি কাঠামো ভিত্তিক। সংস্কৃতি একটি রূপ বিদ্যমান। সংস্কৃতি সাধারণত বস্তুগত ও অবাস্তগত হয়ে থাকে এই রূপেই সংস্কৃতির প্রকাশ লাভ করে।

১১ পার্থিব ও আধ্যাত্মিক দিকঃ সংস্কৃতির দুটি দিক রয়েছে। যেমন-পার্থিব ও আধ্যাত্মিক দিক। মানুষ তার জীবন ধারণের জন্য যেসব সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়োজিত থাকে, তার মধ্যে তার যে চাহিদা পূরণ করে তা হল পার্থিব চাহিদা।

ব্যাক্তি আরো কিছু চাহিদা অনুভব করে। যেমন ছবি আঁকা , সংগীত চর্চা , সাহিত্য রচনা ইত্যাদির মাধ্যমে তার মানসিক চাহিদা পূরণ হয়। এগুলো হলো আধ্যাত্মিক দিক।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সংস্কৃতির মাধ্যমে ব্যক্তির পরিচয় বহন করে। এর মাধ্যমেই একটি জাতিকে জানা যায়। সংস্কৃতি ছাড়া কোন জাতিকে কল্পনা করা যায় না। পৃথিবীর প্রতিটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে।

যা তাদের পরিচয় বহন করে থাকে। সংস্কৃতি হল একটি জাতির দর্পণ স্বরূপ। যার মাধ্যমে কোন জাতিকে উপলব্ধি করা সম্ভব। পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি বিদ্যমান। এবং প্রত্যেক জাতির সংস্কৃতি আলাদা আলাদা।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় সম্মানিত পাঠক আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিবেন।
* ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url