প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ বলতে কী বোঝায়

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হবে। নিচে যে সকল তথ্য তুলে ধরা হবে আশা করি সেগুলো তথ্য আপনাদের উপকারে আসবে। তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ বলতে কি বোঝায়

এছাড়াও এখানে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পদ্ধতি ও উপায় বিকেন্দ্রীকরণের প্রকারভেদ, বিকেন্দ্রীকরণের উপাদান সমূহ নিয়ে আলোচনা করব । আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তাই মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।

ভূমিকা

আধুনিককালে রাষ্ট্রসমূহ জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। বর্তমান রাষ্ট্রগুলোতে পূর্বের তুলনায় রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড বহুগুনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন না আসলে শুধু পুলিশই দায়িত্ব পালন করে না এবং তাকে জনকল্যাণের সকল দিকে নজর দিতে হয়। সরকারকে প্রশাসনের সুফল জনগণের নিকট পৌঁছে দিতে হয়।

বিকেন্দ্রীকরণের সংজ্ঞা

বিকেন্দীকরণ হলো আইন বিচার এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে হতে নিম্ন পর্যায়ে হস্তান্তর।

বিকেন্দ্রীকরণ এমন একটি প্রবণতা নির্দেশ করে যেখানে প্রশাসন ও দায়িত্ব কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হতে আঞ্চলিক ও স্থানীয় সংস্থা সমূহ নিকট নির্দিষ্ট স্থানীয় অবস্থার সাথে সঙ্গতি বিধানের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করা হয়।

জাতিসংঘ কর্তৃক প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পরিকল্পনায় প্রদেশ জেলা সহ এবং গ্রাম এর সকল স্তরকে কর্ম পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করা হয়।

এস. এম .শার্মা-এর মতে, বিকেন্দ্রীকরণ হলো সুনির্দিষ্ট ভাবে কৃতিত্ব হস্তান্তর যেখানে বাস্তবে কার্যপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

সহজ ভাষায় বলা যায় যে,ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে নিম্নতম পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রক্রিয়াকে বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়।

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পদ্ধতি বা উপায়

প্রশাসনিক বিজ্ঞানীগণ প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে দুটি কৌশল বা উপায়ের কথা বলেছেন ।যথাঃ

অঞ্চলভিত্তিক প্রশাসনের অফিস সমূহ সরকারি ক্ষমতা ও কার্যাবলীর বিকেন্দ্রীকরণ এবং অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকার সমূহের নিকট ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তর।

অঞ্চলভিত্তিক প্রশাসনঃ কোন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার আঞ্চলিক ও স্থানীয় সংস্থাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ করে কেন্দ্র থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ে কর্মচারী প্রেরিত হয় এবং এরা কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব হিসেবে কাজ সম্পাদন করে।

অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা প্রদান করাঃ আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিকট নির্দিষ্ট কার্যসম্পন্ন করার দায়িত্ব অর্পণই এর অন্তর্ভুক্ত। এর ক্ষেত্রে আইন বা সংবিধান দ্বারা দায়িত্বে সীমারেখা নির্ধারিত করা হয়ে থাকে।

রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ বলতে সরকার কর্তৃক নতুন প্রশাসনিক স্তর স্থাপনকে বুঝানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্য গঠন এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যেমন জেলা পরিষদ, পৌরসভা , ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদি রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের প্রকৃত উদাহরণ।

বিকেন্দ্রীকরণের প্রকারভেদ

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ

প্রতিনিধিত্বমূলক বিকেন্দ্রীকরণঃ প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বমূলক দিক হলে হল এতে সরকারের প্রত্যক্ষ কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা এ ধরনের বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া প্রশাসনের একটি নিজস্ব নীতিমালা থাকে। এসব নীতিমালা কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে না।

স্থানীয় ক্ষমতার অর্পণঃ প্রশাসনের কাজ সম্পাদনের জন্য আইনের মাধ্যমে নির্বাচিত অথবা সরকারের মনোনীত ব্যাক্তিদের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় আমলাতন্ত্রের পরিবর্তে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারের বিশেষভাবে মনোনীত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিচালনা করা হয়। ক্ষমতা অর্পণ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে বৈধতা পায়। আমাদের দেশে ইউনিয়ন পরিষদ, থানা ও উপজেলা জেলা পরিষদ পৌরসভা সিটি কর্পোরেশন অনুরূপ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত।

বিপুঞ্জিভূতকরণঃ বিপুঞ্জিভূতকরণ বলতে প্রশাসনের এমন একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায় যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থেকে দায়িত্ব ও ক্ষমতা পরিচালনা করা হয়। এ প্রক্রিয়ার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন কয়েকটি ইউনিটের বিভক্ত করে ক্ষমতাকে ভাগ করে দেওয়া হয়। 

বেসরকারিগণঃ এ ধরনের বিকেন্দ্রীকর্ণে সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের কিছু অংশ বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যক্তিবর্গের হাতে  ন্যাস্ত করা হয়। তবে এই প্রক্রিয়ার শুধু সেবা ধর্মীয় ও মানব কল্যাণের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। মূলত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন তথা সময়ে সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এ ধরনের বিকেন্দ্রীকরণ পরিচালিত হয়ে থাকে।

বিকেন্দ্রীকরণের উপাদানসমূহ

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের বেশ কয়েকটি উপাদান লক্ষ্য করা যায় নিম্নে এইগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

প্রশাসনিক উপাদানঃ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অন্যতম মূল উপাদান হলো প্রশাসনিক উপাদান। এই উপাদানটি প্রশাসনের গতিশীলতাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। আর এ উপাদানের বিষয়গুলো হলো-সংস্থার বয়স , সংস্থার আঞ্চলিক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা , সংস্থার কর্ম সম্পাদনের গতি ও মিতব্যয়িতা  ইত্যাদি। এইসব উপাদান দিয়ে যে কোন প্রশাসনিক সংগঠনের কেন্দ্রিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

দায়িত্বশীলতার উপাদানঃ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি দায়িত্বশীলতার অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। দায়িত্বশীলতা কল্যাণের দিকটি মাথায় রেখে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের কার্যাবলী সম্পাদন করতে হয়।

 যদি কোন প্রশাসনিক সংগঠনে দায়িত্বশীলতার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয় তাহলে ওই সংগঠনের বিকেন্দ্রীকরণ সফল হতে পারেনা। অনেক সময় আঞ্চলিক পর্যায়ে কর্মকর্তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাই বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় দায়িত্বশীলতার ওপর অধিক জোর দেওয়া হয়।

বাহিক্য উপাদানঃ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে কতিপয় বাহিক্য উপাদান ক্রিয়াশীল থাকে। এইসব উপাদান সমূহের মাধ্যমে নাগরিকদের প্রশাসনিক ক্রিয়ায় অধীনস্থ করা যুক্তরাষ্ট্রীয় আঞ্চলিক সংস্থা সমূহ যোগসূত্র স্থাপন এবং আঞ্চলিক কার্যাবলী কে রাজনৈতিক চাপের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে তোলা।

কার্য সম্পর্কিত উপাদানঃ প্রশাসনের বিভিন্ন কাজ বিকেন্দ্রীকরণকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে। তখন প্রশাসন কিভাবে কাজ করবে, কোন ধরনের কাজ করবে , কোন এলাকায় কাজ করবে তা নির্ধারণ করতে হয়। এছাড়া প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজও প্রশাসনের কার্য সম্পর্কিত উপাদানের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন।
*ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url