মিশরীয় সভ্যতা কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় সম্মানিত পাঠক হয়তোবা আপনি মিশরীয় সভ্যতা কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী বা জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
মিশরীয় সভ্যতা কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে
আজকে আমরা মিশরীয় সভ্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই সভ্যতা সম্পর্কে জানতে হলে আপনাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তাহলে চলুন পড়া শুরু করা যাক।

ভুমিকা

মিশরীয় সভ্যতা আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। মিশরীয় সভ্যতা আফ্রিকা মহাদেশের যে দেশের অবস্থিত সে দেশের নাম হলো ইজিপ্ট বা মিশর। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৩২০০ অব্দ পর্যন্ত নীল নদীর অববাহিকায় একটি সভ্যতার উদ্ভব ঘটে। যে সভ্যতা মিশরীয় সভ্যতা নামে খ্যাত।

মিশরীয় সভ্যতা

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা ইতিহাসের প্রাচীনতম এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধময় সভ্যতা নামে পরিচিত। এ মিশরীয় সভ্যতা প্রাচীন মিশরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকের অবদান রাখে। প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল মিশরের নীল নদকে কেন্দ্র করে। যা বর্তমানে মিশরীয় সভ্যতা নামে পরিচিত।

প্রথম রাজবংশের শাসন শুরু হয় ৩২০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে। এই সময় থেকে শুরু হয় মিশরের ঐতিহাসিক যুগের সূচনা। একই সময়ে নারমার বা মেনেস হন একাধারে মিশরের প্রথম নরপতি এবং পুরোহিত। তিনি সর্বপ্রথম ফারাও-এর দায়িত্ব ও মর্যাদা লাভ করে থাকেন।

তারপর থেকে ফারাওদের অধীনে প্রাচীন মিশর বিশ্ব সভ্যতার অগ্রগতিতে একের পর এক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়। ফারাওয়রে অধীরে মিশরের রাজনৈতিক উচ্চ ও নিম্ন দিক একীকরণের ফলে এই মিশরীয় সভ্যতা সু্সংহত রূপ লাভ করে। এরপর থেকে মিশরীয় সভ্যতার বিকাশ লাভ করতে থাকে।

ভৌগলিক অবস্থান 

মিশরীয় সভ্যতার ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সভ্যতাটি তিনটি মহাদেশ দ্বারা গঠিত। তিনটি মহাদেশের নাম গুলো হলো এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ। এই তিনটি মহাদেশ দ্বারা বেষ্টিত এবং ভূমধ্যসাগরের উপকূলে এই মিশরীয় সভ্যতাটি অবস্থিত।
 প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার মানচিত্র
মিশরীয় সভ্যতার উত্তরে রয়েছে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে হয়েছে লোহিত সাগর, পশ্চিমের সাহারা মরুভূমি এবং দক্ষিণে রয়েছে দক্ষিণ সুদান এছাড়াও রয়েছে আফ্রিকার আরো অন্যান্য দেশ। এর মোট আয়তন প্রায় চার লক্ষ বর্গমাইল।

মিশরীয় সভ্যতা ২৫০০ বছরের ও বেশি সময় ব্যাপী স্থায়ী ছিল। প্রাচীন মিশরের নিরবিচ্ছিন্ন ও দীর্ঘ ইতিহাসের সূচনা হয় ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। বিশেষ করে নবোপলীয় যুগে। তবে মিশরের সভ্যতার গোড়াপত্তন হয় মেনেসের নেতৃত্বে, যা প্রায় তিন হাজার বছর ধরে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিল।

খ্রিস্টপূর্বে দশম শতকে লিবিয়ার এক যোদ্ধা জাতি ফারাওদের সিংহাসন দখল করে নেয়। ৬৭০-৬৬২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যাসিরিয়রা মিশরের অধিপত্য বিস্তার লাভ করে। ৫২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্য মিশর দখল করে নিলে প্রাচীন মিশরের সভ্যতার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়।

মিশরের নীল নদ

মিশরকে নীলনদের দান বলা হয়ে থাকে। মিশরের নীল নদের অববাহিকায় মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। নীলনদ আফ্রিকা মহাদেশের একটি নদ। পৃথিবীর যতগুলো নদ-নদী রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মিশরের নীল নদ। কারণ পৃথিবীর দীর্ঘতম নদ বলা হয় নীল নদকে। এই নীল নদীর দুইটি উপনদী রয়েছে একটি হলো শ্বেত নীল নদ অপরটি হলো নীলাভ নীল নদ।

এই দুটি নদের মধ্যে দীর্ঘতর নদ হলো শ্বেত নীল নদ। শ্বেত নদটি আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগের হ্রদ অঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়ে থাকে। এবং নীলাভ নীল নদ ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়। যা পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুদানে প্রবেশ করে। শ্বেত নীল নদ এবং নীলাভ নীল নদ এই দুটি উপনদী গিয়ে মিলিত হয় সুদানের রাজধানীর নিকটে।


নীলদদের দৈর্ঘ্য ৬,৮৫৩ কিলোমিটার বা ৪,২৫৮ মাইল। প্রস্থ ২.৮ কিলোমিটার বা ২ মাইল। এবং নীল নদের উচ্চতা ২,৭০০ মিটার বা ৮,৮৫৮ ফিট। নীল নদটি রয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ জুড়ে সেগুলো দেশের নাম হলো; ইথিওপিয়া, সুদান,মিশর, উগান্ডা, গণতান্ত্রিক কাঙ্গো প্রজাতন্ত্র,কেনিয়া,তানজানিয়া, রুয়ান্ডা,বুরুন্ডি এবং দক্ষিণ সুদান ইত্যাদি।

ইসলাম ধর্মমতে নীল নদের প্রধান উৎপত্তিস্থল হল সিদরাতুল মুনতাহার নামক পাদদেশে। মিশরের নীলনদের উৎপত্তি হয় আফ্রিকার লোক ভিক্টোরিয়া থেকে। সেখান থেকে এই নদটি নানা দেশ হয়ে মিশরের মধ্যে দিয়ে ভূমধ্যসাগরে এসে পড়েছে।

ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস যথার্থ বলেছেন- 'মিশর নীল নদের দান' নীলনদ না থাকলে মিশর মরুভূমিতে পরিণত হতো। প্রাচীনকাল থেকে প্রতি বছর নীল নদে বন্যা হতো। বন্যার পানি সরে গেলে  নদীর দুই তীরে পলি জামা পড়তো। এই পলি জমা পড়ে জমি উর্বর হতো যার ফলে জমে থাকা পলি মাটিতে নানা ধরনের ফসল চাষ করা হতো।

মিশরের রাষ্ট্র ও সমাজ

প্রাক-রাজবংশীয় যুগে মিশর কতগুলো ছোট নগর রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। এগুলোকে 'নোম' বলা হতো। মিশরের প্রথম রাজা বা ফারাও (মেনেস বা নারমার) সমগ্র মিশরকে ৩২০০ অব্দে ঐক্যবদ্ধ করে একটি রাজ্য গড়ে তোলেন। যার রাজধানী ছিল দক্ষিণ মিশরের মেম্ফিসে। তখন থেকে মিশরের ঐক্যবদ্ধ রাজ্য ও রাজবংশের উদ্ভব ঘটে।
প্রাচীর মিশরীয়দের পিরামিড
মিশরীয় 'পের -ও' শব্দ থেকে ফারাও শব্দের উৎপত্তি লাভ করে। ফারাওরা ছিল অত্যন্ত ক্ষমতাসীন। তারা নিজেদের সূর্য দেবতার বংশধর বলে মনে করতেন। ফারাও পদটি ছিল মিশরের বংশানুক্রমিক। অর্থাৎ ফারাওয়ের ছেলে উত্তরাধিকার সূত্রে ফারাও হবে।

পেশার উপর ভিত্তি করে মিশরীয়দের কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন, রাজ পরিবার, পুরোহিত, অভিজাত, লিপিকার, ব্যবসায়ী, শিল্প এবং কৃষক ও ভূমিদাস শ্রেণি।


মিশরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মিশরে উৎপাদিত ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গম,যব, তুলা, পেঁয়াজ এবং পিচফল ইত্যাদি। ব্যবসা বাণিজ্যের দিক দিয়েও মিশর ছিল অন্যতম।

মিশরে উৎপাদিত গম,লেনিনের কাপড় ও মাটির পাত্র ক্রিট দ্বীপ, ফিনিশিয়া , ফিলিস্তিন ও সিরিয়ায় রপ্তানি করা হতো। বিভিন্ন দেশ থেকে মিশরীয়রা স্বর্ণ,রৌপ্য, হাতির দাঁত কাঠ ইত্যাদি আমদানি করত।

মিশরীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি

প্রাচীন মিশরীয়দের নানা অবদান রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিচে বর্ণনা করা হলো,
  • লিখন পদ্ধতি বা অক্ষর আবিষ্কার
  • কাগজ আবিষ্কার
  • মিশরের পিরামিড সমূহ
  • মিশরের মন্দির
  • মিশরের গণিত ব্যবস্থা
  • চিকিৎসা ব্যবস্থা
  • সেচব্যবস্থা ও কৃষি উৎপাদন কৌশল
  • মিশরীয়রা প্রথম জাহাজ নির্মাণ করেন
  • মিশরীয় চিনামাটি ও কাঁচশিল্পবিদ্যা এবং
  • অট্টলিকা নির্মাণের জন্য পাথর খনন ইত্যাদি।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় সম্মানিত পাঠক এতক্ষণ আমরা মিশরীয় সভ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিবেন।
* ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url