সভ্যতায় মিশরীয়দের অবদান সম্পর্কে জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় সম্মানিত পাঠ হয়তোবা আপনি মানব সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে মিশরীয়দের অবদান সম্পর্কে জানতে চান বা জানতে আগ্রহী তাহলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
এছাড়া মিশরীয়দের লিখনপদ্ধতি ও কাগজ আবিষ্কার , মিশরীয়রা ভাস্কর্য তৈরিতে, কৃষি ক্ষেত্রে যে অবদান রাখে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন দেরি না করে পড়া শুরু করা যায় এবং আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
আজ থেকে বহু বছর আগের কথা। মানুষ তখন কৃষি কাজ জানতো না। তখন শুধু কেবলমাত্র তারা বনে ঘুরে বেড়াতো। ক্ষুধা পেলে বনে ঘুরে ঘুরে ফলমূল সংগ্রহ করত এবং বিভিন্ন পশুর কাঁচা মাংস ছিল তাদের খাদ্য। এরপর মানুষ পাথর ভেঙে অস্ত্র তৈরি করতে শেখে। ওই সময় পাথরই ছিল তাদের একমাত্র অস্ত্র। এইজন্য এই যুগে বলা হতো পাথরের যুগ।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে জেনে নিন
ধীরে ধীরে মানুষ দলবদ্ধ ভাবে বসবাস শুরু করে। দলবদ্ধভাবে বসবাসের ফলে তারা আগুনের ব্যবহার জেনে নেয়। দলবদ্ধভাবে পশু শিকার করে। এর ফলে মানুষ যাযাবর জীবনের অবসান ঘটিয়ে কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ধীরে ধীরে মানুষ নিজেদের তাগিদে কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে শিখে। এইভাবে শুরু হয় মানব সভ্যতা।
সভ্যতায় মিশরীয়দের অবদান
পৃথিবীতে অনেকগুলো মহাদেশ রয়েছে তার মধ্যে একটি মহাদেশে মিশরীয় সভ্যতার উদ্ভব ঘটে। সে মহাদেশের নাম হলো আফ্রিকা মহাদেশ। মিশরের নীলনদের তীরে মিশরীয় সভ্যতার উদ্ভব ঘটে। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস যথার্থই বলেছিলেন-তিনি মিশরকে নীল নদে দান বলে অভিহিত করেছেন।
প্রাচীর মিশরীয় সভ্যতায় মিশরীয়দের অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মিশরীয় সভ্যতায় মিশরীয়দের অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তাদের অবদানগুলোর মধ্যে কিছু অবদান নিম্নে আলোচনা করা হলো;
- মিশরীয়দের ধর্মীয় চিন্তা
- ভাস্কর্য তৈরিতে অবদান
- লিখন পদ্ধতিতে অবদান
- কাগজের আবিষ্কার
- জ্ঞান ও বিজ্ঞান চর্চা
- দর্শন চর্চা
- সাহিত্যের ক্ষেত্রে
- কাগজ ও কলমের ব্যবহার
- শিক্ষাক্ষেত্রে মিশরীয়দের অবদান
- শিল্প ক্ষেত্রে মিশরীয়দের অবদান
- ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অবদান
- কৃষিতে মিশরীয়দের অবদান
- সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান
- সরকার পদ্ধতিতে অবদান
- গণিত শাস্ত্রে মিশরীয়দের অবদান
- মিশরীয়রা সর্বপ্রথম পঞ্জিকা আবিষ্কার করেন
- চিকিৎসা শাস্ত্রে মিশরীয়দের অবদান এবং
- নীলনদে মিশরের অবদান ইত্যাদি।
মিশরীয়দের ধর্ম বিশ্বাস
প্রাচীন মিশরীয় জাতির মতো অন্য কোন জাতি ধর্মের প্রতি এত জোর দিতো না। অন্য কোন জাতির মতো তারা জীবনের সকল ক্ষেত্রে ধর্মীয় নিয়ম কানুন রীতি রীতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল না। কারণ মানব সভ্যতার অনেক রীতিনীতি, ধ্যান-ধারণা,আইন-কানুন, আচার অনুষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল প্রাচীন মিশরে। মিশরীয়রা জড় বস্তুর পূজা করত এবং মূর্তি পূজা করত। আবার তারা জীবজন্তুরও পূজা করত।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে তাদের ধর্ম বিশ্বাসের ও পরিবর্তন ঘটেছে। মিশরীয়রা সূর্য দেবতাকে বিশ্বাস করতেন। প্রাকৃতিক শক্তি শস্য ও নীল নদের দেবতারা মিলিতভাবে সমগ্র পৃথিবী পরিচালনা করতে বলে মিশরীয়দের ধারণা।
এছাড়া মিশরীয়রা আরো বিশ্বাস করতে যে মৃত ব্যক্তি আবার একদিন জীবিত হয়ে উঠবে। আর সেই কারণেই তারা মৃত দেহকে তাজা রাখার জন্য মমি করে রাখা হতো। আর এইসব চিন্তা ভাবনা থেকেই তারা মমিকে রক্ষা করার জন্য পিরামিড তৈরি করেছিলেন।
মিশরে অবস্থিত প্রাচীন প্রস্তরনির্মিত পিরামিড |
মিশরের ফারাওরা স্রষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে দেশ শাসন করে। মিশরের ফারাওরা ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তারা নিজেদের সূর্য দেবতার বংশধর বলে মনে করতে। এবং তারা ছিলেন প্রধান পুরোহিত ও অন্যান্য পুরোহিতকে পুরোহিত হিসেবে তারা নিয়োগ করে থাকে।
মিশরীয়দের শিল্প ক্ষেত্রে অবদান
মিশরীয়রা শিল্পের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাদের চিত্রকলা বৈচিত্র্যপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানব সভ্যতা বিকাশে ইতিহাসে মিশরীয় সভ্যতা কে বলা হতো শ্রেষ্ঠ নির্মাতা।
মিশরের চিত্রশিল্প গড়ে ওঠার সবচেয়ে বড় কারণ হলো তাদের ধর্ম বিশ্বাস। মূলত তাদের ধর্মবিশ্বাস থেকে চিত্রশিল্প গড়ে ওঠে। তারা সমাধি এবং মন্দিরের দেয়াল সাজাতে গিয়ে চিত্রশিল্পের সূচনা করেন। মিশরীয়দের প্রিয় রং ছিল সাদা-কালো।
সমাধি, পিরামিড, মন্দির, প্রাসাদ এবং সাধারণ ঘরবাড়ির দেয়ালে মিশরীয় চিত্রশিল্পরা নিখুঁত ভাবে অসাধারণ ছবি আঁকতেন। এছাড়া মিশরীয়রা দক্ষ শ্রমিক ও দক্ষ ও প্রকৌশলী কারিগরিদের মাধ্যমে মিশরের আকাশ চুম্বকীয় পাথরের অট্টালিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়।
মিশরীয় কারু শিল্পেও অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। যেমন; আসবাবপত্র, মৃৎপাত্র, সোনা,রুপা, অলংকার,মমির মুখোশ, দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র, হাতির দাঁত ইত্যাদি কারু শিল্প মিশরীয়রা দক্ষতার সাথে তৈরি করেন।
ভাস্কর্য তৈরিতে অবদান
ভাস্কর্য তৈরিতে মিশরীয়রা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। মিশরীয়দের মতো অন্য কোন সভ্যতা এত প্রতিভার সাথে ভাস্কর্য তৈরিতে সক্ষম হয়নি। ব্যাপকতা বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় ভাবধারায় প্রভাবিত বিশাল আকারের পাথরের মূর্তিগুলো ভাস্কর্য শিল্পে মিশরীয়দের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান বহন করে।
তাদের প্রতিটি ভাস্কর্য ছিল ধর্মীয় ভাবধারায়। ধর্মের দ্বারা তাদের আচার অনুষ্ঠান এবং মতাদর্শ প্রভাবিত ছিল। প্রতিটি শিল্পের মাঝেই তাদের ধর্মীয় দিক ফুটে উঠতো। মিশরীয়দের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য হচ্ছে গির্জার অতুলনীয় স্ফিংকস।
মিশর সভ্যতায় স্ফিংকসের প্রতিমূর্তি |
স্ফিংকস হচ্ছে এমন একটি মূর্তি যার দেখতে সিংহ এবং মানুষের মতো। স্ফিংকস- এর দেহ দেখতে সিংহের মতো এবং মুখ মানুষের মুখের মতো। মিশরে অনেকগুলো পিরামিড রয়েছে। তার মধ্যে মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিডের নাম হলো ফারাও খুফুর পিরামিড।
লিখন ও কাগজ পদ্ধতি আবিষ্কার
মিশরীয় সভ্যতা অনেক ক্ষেত্রে অবদান রাখে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো লিপি বা অক্ষর আবিষ্কার করা। সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মিশরীয় লিখন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে থাকে। মিশরীয় সভ্যতা ৫ হাজার বছর পূর্বে সর্বপ্রথম ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণের বর্ণমালা আবিষ্কার করেন।
মিশরীয়রা প্রথম দিকে ছবি আঁকার মধ্যে দিয়ে তারা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতো। আর এই লিখন পদ্ধতির নাম ছিল চিত্রলিপি। আর সেই চিত্র লিপিকে হায়ারোগ্লিফিক বা পবিত্র অক্ষর বলা হতো।
হায়ারোগ্লিফিক বা পবিত্রবাণী লেখার নমুনা |
মিশরীয়রা নলখাগড়া জাতীয় গাছের কান্ড থেকে কাগজ বানাতে শেখে। এবং সেই কাগজের উপরে তারা লিখতো। গ্রিকরা মিশরীয়দের তৈরি কাগজের নাম দেয় 'প্যাপিরাস'। আর এই শব্দ থেকেই ইংরেজি পেপার শব্দের উৎপত্তি লাভ করে।
কৃষিতে মিশরীয়দের অবদান
মিশরীয় সভ্যতা ছিল কৃষির উপর নির্ভরশীল। যার কারণ হলো নীল নদের প্লাবন,নাব্য, পানি প্রবাহের মাপ, জোয়ার ভাটা ইত্যাদি। নীল নদে উঁচু বাদ দিয়ে উন্নত সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে মিশরীয়রা কৃষি যুগে প্রবেশ করে। প্রধানত কৃষির উপর নির্ভর করেই প্রাচীন মিশরের অর্থনৈতিক কাঠামো ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
মিশরীয়দের উৎপাদিত ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গম, যব,তুলা, পেঁয়াজ, পিচফল, বার্লি সহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল। এছাড়া অর্থকারী ফসলের মধ্যে ছিল কাপাস তুলা , একপ্রকার সাল জাতীয় তন্তু ও পাট ইত্যাদি।
বিজ্ঞান শাস্ত্রে মিশরীয়দের অবদান
ধর্মের কারণে মিশরীয়রা বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিলেন। তারা পরলোককে বিশ্বাস করতে এবং ফারাওরা পরবর্তী জন্মেও রাজা হবেন এটাই তাদের বিশ্বাস ছিল। এর জন্য তারা ফারাওদের দেহকে তাজা রাখার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যার কারনে মমি তৈরি করা হয়।
মিশরীয় বিজ্ঞানীরা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মৃতদেহকে পচন থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় তাদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ক্রিয়া-কলাপের মাধ্যমে।
জ্যোতিবিদ্যা ও অঙ্কশাস্ত্রের অবদান
মিশরীয়রা জ্যোতি বিদ্যা ও অঙ্কশাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মিশরীয়রা অঙ্কশাস্ত্রের দুটি শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে একটি হলো জ্যামিতি শাখা অপরটি হল পাটিগণিত শাখায়। এই সভ্যতার মানুষ যোগ, বিয়োগ ও ভাগের ব্যবহার ভালোভাবে জানত।
আরো পড়ুনঃ মিশরীয় সভ্যতা কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে
৪২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ মিশরীয়রা প্রথম সৌর পঞ্জিকা আবিষ্কার করেন। ৩৬৫ দিনে যে এক বছর হয় সেই হিসেবেও আবিষ্কার করে মিশরীয় সভ্যতা। এছাড়াও প্রাচীন মিশরের আদিবাসীরা সময় নির্ধারণের জন্য সূর্যঘড়ি, ছায়াঘড়ি, জলঘড়ি ইত্যাদি আবিষ্কার করে।
চিকিৎসাশাস্ত্রে মিশরীয়দের অবদান
চিকিৎসাশাস্ত্রে মিশরীয়রা যে অবদান রেখেছে তার চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য মিশরীয়রা অনেক অগ্রগতি লাভ করেছিলেন। তারা চোখ, দাঁত, পেটের রোগ নির্ণয় করতে।
এছাড়াও চিকিৎসা শাস্ত্রের মিশোরীয়দের আরো একটি বড় অবদান হলো তারা অস্রপাচারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার কৌশল জানত। এছাড়াও তারা ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাতে পারতো। হৃদপিণ্ডের গতি এবং নাড়ির স্পন্দন নির্ণয় করতে জানতো।
দর্শন ও সাহিত্যচর্চা
মিশরীয়দের অবদানগুলোর মধ্যে আরও একটি অবদান হলো দর্শন ও সাহিত্যচর্চা যা মিশরীয় সভ্যতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। মিশরীয়রা সেই সময় দর্শক এবং সাহিত্যচর্চা করতেন। তাদের রচনায় দুঃখ হতাশার কোন অবকাশ ছিল না। তারা সবসময় আশাবাদী ছিলেন। তাদের লেখনিতে তাঁরা সবসময় আনন্দের প্রকাশ তুলে ধরতেন।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় সম্মানিত পাঠক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা মিশরীয় সভ্যতার অবদান সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলাম। অবশ্যই আপনারা এই সম্পর্কে না জেনে থাকলেও কিছুটা হলেও জানতে পেরেছে। তাই এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনার বন্ধুদেরও সুযোগ করে দিবেন।
* ধন্যবাদ*
ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url