বনশূন্যতার কারণ সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বনশূন্যতার কারণ, বন সংরক্ষণের উপায় বা কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আশা করি  এ আটিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
বনশূণ্যতার কারণগুলো আলোচনা কর

বনভূমি বিশ্বের একটি অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। এই প্রাকৃতিক সম্পদ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের জন্য ধ্বংস করে থাকে। নিম্নের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো;

ভূমিকা

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষ আজ বনভূমি কেটে বনভূমি কেটে আবাসন তৈরি করেছে। মানুষের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে বনভূমি ধ্বংস করে ফেলছে। তাই বনশূন্যতা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন ধ্বংস করার ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

বন উজাড় বা বন ধ্বংস

সাধারণ বনশূন্যতা বলতে বোঝায় কোন এলাকা থেকে গাছপালা কেটে বনাঞ্চলের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা এবং উক্ত ভূমিকে বৃক্ষহীন রাখা।

বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য দেশের মোট আয়তনে ভূ-ভাগে ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বনভূমি একটি দেশে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ভারসাম্যই বজায় রাখে না এটি দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন সাধন করে থাকে। 

বনশূন্যতা বা বন উজাড় বলতে কোন এলাকায় বনভূমি কেটে ফেলাকে বোঝায়। বনভূমি কেটে বনভূমির পরিমাণ কমিয়ে আশাই হলে বনশূন্যতা।বন শূন্যতার ফলে আমাদের দেশে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্যতম কারণ হলো বন শূন্যতা।

মানুষ তাদের জীবিকা বা আসবাবপত্র তৈরীর জন্য বনভূমি কেটে ফেলছে। বন নিধন করার একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধির কারণে সমাজে একদিন হয়তো এর চেয়ে মারাত্মক দুর্যোগ হবে।

বর্তমান বিশ্বের পরিসংখ্যান আলোচনা করলে যেসব দুর্যোগের কথা পাওয়া যায় তাদের বেশিরভাগই সংগঠিত হয়েছে বনাঞ্চলে পরিমাণ কম থাকার কারণে। পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বনভূমির কোন বিকল্প নেই। কিন্তু মানুষের লোভের জন্য এই বনভূমি আজ ধ্বংসের পথে।

বনশূন্যতার কারণ

বনভূমি বা বনজ সম্পদ মানব সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে লোভী মানুষ আজ তারা নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য এসব বনভৃমি ধ্বংস করে থাকে। এসব  বনভৃমি ধ্বংসের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ ধ্বংসের মুখে। যা মানব সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

বিভিন্ন কারণের বনশূন্য হয়ে থাকে। মানুষের অবিবেচনা, লোভ ,অসচেতনতা, অনিবার্য প্রয়োজন ইত্যাদির কারণে যেমন বন উজার হয়, ঠিক তেমনি প্রাকৃতিক কারণেও বন শূন্য হয়ে থাকে। এই প্রাকৃতিক বন শূন্যতা মানুষ ইচ্ছে কোলে রোধ করতে পারেনা। তবে মানুষের কারণে যেমন শূন্যতা ঘটে সেটা মানুষের ইচ্ছে করলে প্রতিরোধ করতে পারে। তাই এখানে মন উজারের মানবসৃষ্টি কারণ গুলো আলোচনা করা হলো। মানবসৃষ্ট বন উজাড়ের কারণ মূলত দুটি। যথা;

ক) প্রত্যক্ষ কারণ

খ) পরোক্ষ কারণ

প্রত্যক্ষ কারণ

বন উজারের বহুবিধ প্রত্যক্ষ কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেসব কারণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেগুলো নিম্ন আলোচনা করা হলো-

ক) জুম চাষঃ জুম চাষ মূলত একটি হস্তান্তরিত কৃষি পদ্ধতি। মূলত পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে চাষ করাকে জুম চাষ বলা হয়। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজও জুম চাষ রয়েছে। এটা সাধারণত পাহাড়ি এলাকার জনগোষ্ঠীরা করে থাকে। জুম চাষ করার সময় তারা প্রচুর পরিমাণ গাছপালা লতাপাতা ইত্যাদি পাহাড়ি বন অঞ্চলকে ধ্বংস করে, যা পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।

খ) চারণ ভূমিঃ বন উজারের অন্যতম কারণ হলো চারণভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি। এটা বাংলাদেশে তেমন দেখা না গেলেও উন্নত বিশ্বে প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত চরণ ভুমির জন্য প্রয়োজন হয় বিশাল খেলার মাঠ, আর এই মাঠ তৈরির জন্য উন্নত বিশ্ব বেছে নিয়েছে এই বনাঞ্চলকে। সাধারণত বনাঞ্চলকে ধ্বংস করে তারা গবাদি পশু চরণ ভূমি তৈরি করে। এতে প্রচুর পরিমাণ বন ধ্বংস হয়ে থাকে।

গ) চাষযোগ্য জমি বৃদ্ধিঃ আমাদের এই বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় আবাদি জমির পরিমাণ বেশ কম। যার ফলে অধিক জনসংখ্যার খাদ্যের জন্য চাপ পড়ছে কৃষি জমির উপর। এছাড়া বাংলাদেশের জনগণ দরিদ্র। এদের বাড়তি আয়কম। আর এইসব কারণে এদেরকে একমাত্র কৃষির ওপর নির্ভর করতে হয়। যার ফলে তারা বনভূমি ধ্বংস করে।

ঘ) শহরায়নঃ জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে এর চাপ পড়ছে শহরের উপর। অন্যদিকে দরিদ্রতার কারণে মানুষ শহরে চলে আসছে। ফলে তাদের আবাসন সংকট দেখা দিচ্ছে। এই আবাসন সংকট নিরসনের জন্য শহরের সংখ্যা এবং সীমানা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে যেখানে গাছপালা লাগানো হতো সেখানে ভবন তৈরি হচ্ছে। এতে করে প্রচুর পরিমাণে বন ধ্বংস হচ্ছে।

ঙ) আসবাবপত্র এবং নির্মাণ সামগ্রীঃ দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার কারণে ঘরবাড়ি তৈরি করতে হয়। আর এর জন্য প্রয়োজন হয় খাট পালঙ্ক আলনা প্রভুতি আসবাবপত্র যা আমরা মূলত গাছ থেকে পেয়ে থাকি। আমাদের এই প্রয়োজন মিটানোর নিমিত্তে বন উজার হচ্ছে।

চ) কাঁচামাল সরবরাহঃ বৃক্ষ প্রাকৃতির দান। এ বৃক্ষ হতে আসবাবপত্র ঔষধ সহ নানা ধরনের কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়। কাগজ তৈরিতে গাছ বাঁশ বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো বেশিরভাগ আনা হয় বন হতে। যার কারণে বন উজাড় হচ্ছে।

পরোক্ষ কারণঃ বন ও উজারের প্রত্যক্ষ কারণগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু পরোক্ষ কারণ লক্ষ্য করা যায় । যা নিচে আলোচনা করা হলো;

ক) সরকারি নীতিমালার ব্যর্থতাঃ বনায়ন সম্বন্ধে নীতিমালা থাকলেও সেটা সঠিকভাবে পালন করা হয় না। যার ফলে দুষ্কৃতকারীরা গাছ কেটে নিলেও তার প্রতি নজর দেয় না। আবার অন্যদিকে বন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে বন উজার হচ্ছে।

খ) ভূমি মালিকানা পদ্ধতিঃ মুঘল আমলে এই উপমহাদেশে জমিতে ব্যাক্তি ছিল না। ব্রিটিশদের আগমনে ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিতে ব্যক্তির মালিকানা সৃষ্টি হয়। এই বন্দোবস্তুর কারণে জমির মালিকানা চলে যায় জমিদারদের হাতে। ফলে তারা যখন ব্রিটিশদের কর পরিশোধ করতে ব্যর্থ হতো, তখন গাছ বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করতে। এইভাবে তখন থেকে বন শূন্যতা শুরু হয়।

গ) কৃষি নীতিমালাঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৃষি নীতিমালা বনায়ন কে ব্যাপকভাবে
প্রভাবিত করেছে। সবুজ বিপ্লবের নামে যে প্রকল্প চালু হয় তাদের আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য অনেক বনভূমি নষ্ট করা হয়। ফলে বন শূন্যহয়ে থাকে।

ঘ) জনসংখ্যাঃ অতিরিক্ত জনসংখ্যা বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক সমস্যা। এত মানুষের দৈনন্দিন নানাবিদ প্রয়োজনে তুলনায় বনভূমির সরবরাহ ক্ষমতা সীমিত। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমাদের বনভূমি ক্রমশ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। ফলে বন উজার হচ্ছে।

ঙ) দারিদ্রতাঃ সকল উন্নতির ক্ষেত্রে দারিদ্রতা প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। দারিদ্রতার কারণে মানুষ নিজে বন ধ্বংস করছে। এতে করে বন উজার হচ্ছে।

চ) রাজনৈতিক প্রভাবঃ অনেক জায়গাতেই রাজনৈতিক দলগুলো নিজের প্রভাব খাটিয়ে এবং অনেকে আবার রাতের অন্ধকারে সরকারি গাছগুলো কেটে শেষ করছে। যার ফলে বন উজার হচ্ছে।

ছ) অর্থনৈতিক দুরবস্থাঃ সাধারণত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে চারিদিকের অভাব দেখা যায়। এ অভাবের কারণে মানুষ কোন উপায় না পেয়ে তারা লাগানো গাছ বিক্রি করে অভাব দূর করার চেষ্টা করে। ফলে এতে করে বন উজার হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ স্বাস্থ্যহীনতা দূর করার উপায়সমূহ সম্পর্কে জেনে নিন

বন সংরক্ষণের কৌশল বা উপায়

বিশ্ব মানব সমাজকে বসবাসের উপযোগী করার জন্য বন সংরক্ষণ করা বিশেষ প্রয়োজন। কিভাবে বনকে রক্ষা করা যায় তার কিছু কৌশল নিচে আলোচনা করা হলো;

ক) দেশে যেসব পতিত জমি খালি পড়ে আছে সেসব পতিত জমিতে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো।

খ) গাছ কাটা বন্ধ করার জন্য আলাদা আইন তৈরি করতে হবে।

গ) বনে প্রায়ই আগুন লাগে। যাতে করে বনে আগুন না লাগে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

ঘ) যেসব জায়গায় পরিণত গাছ লাগানো হবে সেখানে চারা গাছ রোপন করা উচিত।

ঙ) বনায়নের জন্য সরকার কর্তৃক জনগণের সাহায্যে সহযোগিতা করতে হবে।

চ) গাছ লাগানোর সম্পর্কে স্কুল ,কলেজ  ,মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রচারাভিযান চালাতে হবে।

ছ) বনজ উদ্ভিদের রোগাক্রান্ত প্রতিরোধ করতে হবে।

জ) সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ঝ) ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, উল্লেখিত পদক্ষেপ গুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারলে একদিকে যেমন বন রক্ষা হবে , ঠিক তেমনি অন্যদিকে আমাদের জীব জগতের পরিবেশ সুন্দর এবং বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে।

লেখকে মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে বনশূন্যতার কারণ এবং সংরক্ষণের কৌশল সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোস্টটি আপনাদের পরিচিতদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
*ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url