ই-কমার্সে ব্যবহৃত বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেম পদ্ধতি

প্রিয় সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ই-কমার্সে ব্যবহৃত বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেম পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
ই-কমার্সে ব্যবহৃত বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেম পদ্ধতি
এছাড়াও আমাদের জানতে হবে ই-কমার্স যারা উপস্থাপিত সমস্যাসমূহ। ই কমার্সের যুগে আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে থাকে সে সম্পর্কেও নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন পড়া শুরু করা যাক।

ভূমিকা

আধুনিক যুগে ই-কমার্স আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ই-কমার্স এর মাধ্যমে ঘরে বসে আমরা বিভিন্ন ধরনের জিনিস কেনাকাটা করে থাকি। প্রত্যেক ব্যবসার জন্যই সর্বপ্রথম চিন্তা হচ্ছে লেনদেনের। লেনদেন সঠিকভাবে না হলে কোন ব্যবসায়ী ঠিকঠাক চলতে পারে না।

ই-কমার্সে ব্যবহৃত বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেম পদ্ধতি

বর্তমানে ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে সকল পেমেন্ট সিস্টেম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ
  • ক্রেডিট কার্ড
  • ডেবিট কার্ড
  • স্মার্ট কার্ড
  • ই-মানি এবং
  • ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ইত্যাদি।

ক্রেডিট কার্ডঃ ক্রেডিট কার্ড-এর জন্য প্রথমে ব্যাংকে আবেদন করতে হয়। ব্যাংক সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করে তথ্য সঠিক থাকলে তা অনুমোদন দিয়ে থাকে। অনুমোদিত কার্ডধারী একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বিনা ধারায় তুলতে পারে বা খরচ করতে পারে।

ওই টাকা আবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ব্যাংক তার টাকার ওপর সুদ আরোপ করে থাকে। ক্রেডিট কার্ডে ডুয়াল কারেন্সি ব্যবহার করে টাকাকে ডলারের রূপান্তর করার সুবিধা, বিদ্যমান থাকে। ফলে এর মধ্যে দেশ বিদেশে যে কোন অনলাইন এ কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করা যায়।

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাঃ
  • ক্রেডিট কার্ড নিরাপদে ব্যবহার করা যায় এবং ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ
  • এ ধরনের কার্ডের তাৎক্ষণিক ব্যালেন্স জানা সম্ভব
  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ফলে নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব
  • ঋণ কিস্তি সাহায্যে পরিশোধ করা যায়
  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিল পরিশোধ করা যায়
  • ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ক্রয় করা সম্ভব হয়
  • ক্রেডিট কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপত্তা বেশি থাকে।
ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধাঃ
  • ক্রেডিট কার্ডের ফি বা চার্জ বেশি হয়ে থাকে
  • ক্রেডিট কার্ডের তুলনামূলক সুদের পরিমাণ সাধারণত বেশি হয়
  • এ কার্ডের বাৎসরিক বা চার্জ দিতে হয়
  • নির্ধারিত সময় ক্রেডিট কার্ডের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে সুদের পরিমাণ বেড়ে যাবে
  • এটিএম বুথ হতে টাকা উত্তোলন করলে ন্যূনতম 2% টাকা চার্জ হিসেবে কেটে নেওয়া হয়।
ডেবিট কার্ডঃ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার পর তারা আপনাকে একটি ডেবিট কার্ড দেবে। কখনো কখনো এই কার্ড ব্যবহার বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দিয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো এ কার্ড ব্যবহারের জন্য ফি দিতে হয়।

একটি ডেবিট কার্ড আপনাকে চেক না লিখে আপনার চেকিং অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ ব্যয় করতে দেয়। ডেবিট কার্ডগুলো ক্রেডিট কার্ডের মত দেখা যাচ্ছে। তবে ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড একইভাবে কাজ করে না। ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার ব্যবহার করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম রয়েছে।


তার মধ্যে হল ক্রেডিট কার্ড আপনার ধার করা অর্থ ব্যবহার করে। ক্রেডিট কার্ডগুলো এমন অর্থ ব্যবহার করেনা। যা ইতিমধ্যে আপনার চেকিং অ্যাকাউন্টে রয়েছে।

ডেবিট কার্ডের সুবিধাঃ
  • ডেবিট কার্ডের তাৎক্ষণিক ব্যালেন্স জানা যায়
  • এ ধরনের কার্ড ব্যবহার নিরাপদ এবং অত্যন্ত সহজ
  • অর্থ ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়
  • ঋণ কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়
  • ডেবিট কার্ডের সাহায্যে বিভিন্ন বিল পরিশোধ করা সম্ভব
  • এ কার্ডের সাহায্যে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ক্রয় করা যায়।
ডেবিট কার্ডের অসুবিধাঃ
  • জমাকৃত টাকার ছাড়া অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হয় না 
  • ডেবিট কার্ডের অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ বা ফ্রি দিতে হয়
  • ব্যাংক কর্তৃক নির্দিষ্ট এটিএম বুথ হতে লেনদেন করতে হয়
  • ক্রেডিট কার্ড এর মত পারফরমেন্সের ভিত্তিতে ডেবিট কার্ডে কোনো স্কোর যোগ করা হয় না।
স্মার্ট কার্ডঃ একটি স্মার্ট কার্ড সাধারণত এক ধরনের চিপ কার্ড। যা একটি প্লাস্টিক কার্ড যেটি এমবেডেড কম্পিউটার চিপ। এই চিপটি মেমোরি বা মাইক্রোপ্রসেসর টাইপ, যা ডাটা সঞ্চয় করে এবং লেনদেন করে থাকে। এই ডাটার সাধারণত মান তথ্য বা উভয়ের সাথে সম্পর্কিত এবং কার্ডের চিপে সঞ্চিত থাকে এবং প্রক্রিয়াধীন হয়।

ই-মানিঃ ই-মানি বলতে ইলেকট্রনিক মানিকে বোঝায়। যেমন-ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড এবং নেটওয়ার্ক ই-মানি এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে মূলত তিন ধরনের লেনদেন হয়ে থাকে। আপনি যখন ই-কমার্স সাইটে যেমন অনলাইনে অ্যামাজনে শপিং করেন তখন গ্রাহক থেকে বিক্রেতাদের অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণত ই-মানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।ই-মানির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো পেপাল।

পেপালঃ পেপাল হলো একটি অনলাইন আর্থিক সেবা দানকারী বা পরিষেবা, যা আপনাকে সুরক্ষিত ইন্টারনেট একাউন্ট ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করার অনুমতি দেয়। পেপাল একাউন্টের অনলাইনে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড এর তথ্য যুক্ত করতে পারবেন, এবং যখনই আপনি পেপাল ব্যবহার করে অর্থ প্রদান করেন, তখন সংযুক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ড থেকে তা পরিশোধ হয়ে থাকে।


ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারঃ এটি এমন এক ধরনের অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতি, যেখানে সরাসরি কাগজের অর্ধেক হাত বদলে প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবসা বা স্বতন্ত্র একাউন্টগুলোতে অর্থ স্থানান্তর  করা যায়। বেতন-ভাতা, ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডে স্থানান্তর বা অন্যান্য অর্থ প্রদানের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

ক্যাশঃ ক্যাশ হলো লেনদেনের সবচেয়ে সহজ, নিরাপদ ও বহনযোগ্য পদ্ধতি। লেনদেনের সংখ্যার ক্ষেত্রে অর্থ প্রদানের সর্বাধিক সাধারণ কর্ম হলো ক্যাশ , যার মাধ্যমে কোন ধরনের হয়রানি ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব হয়।

তাছাড়া কোনো ধরনের প্রমাণীকরণেরও প্রয়োজন নেই। কে এবং কোথায় থেকে দিচ্ছে সেটা এখানে মূল্য বিবেচ্য বিষয় না। ক্যাশ লেনদেনের পরিসীমা খুব বেশি প্রসারিত নয়, এটি সীমিত আকারে। নগদে ক্রয় এবং ক্রেতাকে নিজে আসতে হয় বিধায় এই পেমেন্ট সিস্টেম স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হলেও অন্যদের কাছে জনপ্রিয় নাও হতে পারে।

ই-কমার্সের প্রধান সমস্যাসমূহ

  1. অনলাইনে পরিচয় যাচাইয়ের অনুপস্থিতি
  2. প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণ এবং টিকে থাকা
  3. পুরাতন পদ্ধতিতে বিক্রয়
  4. শপিং কাট সমস্যা
  5. গ্রাহকের অনুগত্য বজায় রাখা
  6. পণ্য ফিরে আসা এবং ফেরতের চিন্তা মাথায় রাখা
  7. মূল্য এবং শপিং এর ওপর প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকা
  8. খুচরা বিক্রেতা এবং উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করা
  9. ডাটা সুরক্ষা সমস্যা
  10. ট্রেডমার্ক নিরাপত্তা সমস্যা
  11. কপিরাইট সমস্যা
  12. লেনদেন জনিত সমস্যা।

লেখকের শেষ কথা

সম্মানিত পাঠক বর্তমান যুগ এখন ই-কমার্সের যুগ। আশা করি ই-কমার্স সম্পর্কে পোপর ধারণা পেয়েছেন। এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিবেন।
* ধন্যবাদ*

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url