রক্তরসের কাজ সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমের ক্তরসের কাজ কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করি আপনার এ আর্টিকেলটি পড়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাবেন। তাহলে চলুন পড়া শুরু করা যাক।
প্রাণীদেহের রক্ত এক ধরনের লাল বর্ণের অস্বচ্ছ, আন্তঃকোষীয় লবণাক্ত এবং খানিকটা ক্ষারধর্মী তরল যোজক টিস্যু। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকা প্রয়োজন। যেটি মানুষের দেহের মোট ওজনের প্রায় ৮% ।
ভূমিকা
রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে রক্তরস বলা হয়। রক্তরস রক্তের তরল এবং কঠিন পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত হয়। রক্তরস হলো রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানবদেহের শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ রক্তরস থাকে। রক্তের তরল অংশকে প্লাজমা বলে। রক্তরস মূলত কোষপর্দার বাহিরের রক্তগহ্বরের মধ্যকার তরল পদার্থ। রক্ত রসের প্রায় ৯০% পানি এবং বাকি ১০% দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে বিভিন্ন রকম জৈব এবং অজৈব পদার্থ।
রক্তরসের কাজ
রক্তরস মানব দেহে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১. রক্তকণিকাসহ রক্তরসে দ্রবীভূত খাদ্যসার দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত করা।
২. টিস্যু থেকে বর্জ্য পদার্থ নির্গত করে, সেগুলো রেচনের জন্য বৃক্ষে পরিবহন করা।
৩. শ্বসনের ফলে কোষের সৃষ্ট CO2 কে বাইকার্বনেট হিসেবে ফুসফুসে পরিবহন করা।
৪. রক্ত জমাট বাঁধার প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো পরিবহন করা।
৫. হরমোন, এনজাইম, লিপিড প্রভৃতি দেহের বিভিন্ন অংশে বহন করা।
৬. রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা।
৭. যকৃত, পেশি ইত্যাদি অঙ্গে উৎপন্ন তাপ শক্তিকে সমগ্র দেহে পরিবহন করে দেহের তাপ সমতা রক্ষা করা।
৮. রক্তের তরলতা রক্ষা করে।
৯. ভাসমান রক্তকণিকা সহ অন্যান্য দ্রবীভূত পদার্থ দেহের সর্বত্র পরিবাহিত করা।
১০. রক্তরসের অল্প পরিমাণে অক্সিজেন বাহিত হয়।
১১. পরিপাকের পর খাদ্যসার রক্ত রসে দ্রবীভূত হয়ে দেহের বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে বাহিত করা।
১২. লোহিত রক্ত কণিকায় সংবদ্ধ হওয়ার আগে অক্সিজেন প্রথমেই রক্তরসে দ্রবীভূত হয়।
১৩. টিস্যুর অধিকাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড রক্ত রসে বাইকার্বনেট রূপে দ্রবীভূত হয়ে থাকে।
১৪. টিস্যু থেকে যে সব পদার্থ বের হয়, তার রেচনের জন্য কিডনিতে বা বৃক্কে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৫. রক্তরসে গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড, গ্লিসারল, খনিজ লবণ, ইউরিয়া, এন্টিবডি, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ থাকে।
রক্তেরসের অজৈব এবং জৈব পদার্থ
রক্তরসের প্রায় ৯০% পানি থাকে এবং বাকি ১০% দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে বিভিন্ন রকমের জৈব এবং অজৈব পদার্থ।
রক্তরসের অজৈব পদার্থ
অজৈব পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ। যেমনঃ
- আয়রন
- সোডিয়াম
- পটাশিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- ক্লোরিন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- লৌহ
- আয়োডিন এবং
- O2,CO2 এবং N2 জাতীয় গ্যাসীয় পদার্থ।
রক্তরসে অজৈব পদার্থের পরিমাণ ০.৯০৯২।
রক্তরসের জৈব পদার্থ
১. খাদ্যসারঃ গ্লূকোজ, অ্যামিনো এসিড, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন ইত্যাদি।
২. রেচন পদার্থঃ ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি।
৩. প্রোটিনঃ ফ্রাইব্রিনোজেন,গ্লোবিউলিন, অ্যালবুমিন,প্রোথ্রম্বিন ইত্যাদি।
৪. প্রতিরক্ষামূলক দ্রব্যাদিঃ অ্যান্টিটক্সিন,অ্যাগ্লূটিনিন ইত্যাদি।
৫. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিঃসৃত বিভিন্ন হরমোন।
৬. কোলেস্টেরল,লেসিথিন,বিলিরুবিন ইত্যাদি নানা ধরনের যৌগ।
রক্তে সিরাম কাকে বলে
রক্ত থেকে রক্তকণিকা এবং রক্ত জমাট বাঁধার জন্য যে প্রয়োজনীয় প্রোটিন রয়েছে, সেটাকে সরিয়ে দেওয়ার পর যে তরলটি রয়ে যায়, তাকে সিরাম বলে। অন্যভাবে বলা যায়, রক্ত জমাট বাধার পর যে হালকা হলুদ রঙের স্বচ্ছ রস পাওয়া যায়, তাকে সিরাম বলা হয়।
আরো পড়ুনঃ শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার কৌশল
রক্তরস বা প্লাজমা এবং সিরাম এর মধ্যে পার্থক্য হলো রক্তেরসে রক্ত জমাট বাঁধার প্রয়োজনীয় প্রোটিন থাকে, কিন্তু সিরামে সেটি থাকে না।সিরাম হলো রক্তের তরল উপাদান। সিয়ামে শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা ইত্যাদি জমাট বাঁধার কারণে থাকে না। সিরামে শ্বেত রক্তকণিকা লোহিত রক্ত কণিকা ইত্যাদি উপাদান অনুপস্থিত রয়েছে।
শেষ কথা
প্রিয় সম্মানিত পাঠক এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিবেন।
* ধন্যবাদ*
ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url