মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল কত বছর

প্রিয় সম্মানিত পাঠক হয়তোবা আপনি  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল কত বছর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল কত বছর
এছাড়াও মার্কিন রাষ্ট্রপতির ইলেক্ট্ররাল ভোটের সংখ্যা কত? মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন পড়া শুরু করা যাক।

ভূমিকা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। ব্রিটেনের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানের অস্তিত্ব নেই।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি  কেবলমাত্র তত্ত্বগতভাবে নয়, বাস্তবেও প্রধান শাসক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। 

মার্কিন সংবিধান হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার উৎস।মার্কিন রাষ্ট্রপতির হাতেই রাষ্ট্রের সকল ধরনের প্রশাসনিক ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়ে থাকে। সকল কার্যক্ষেত্রে তিনি হলেন প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ইলেক্ট্ররাল কলেজের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল কত বছর

১৭৮৭ ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির কার্যকর মেয়াদ নিয়ে প্রতিনিধির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মতবিরোধ দেখা দেয়। এই ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে প্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকে রাষ্ট্রপতির কার্যকাল বা মেয়াদ ৭ বছর দাবি করেন।

শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি কার্যকালের মেয়াদ চার বছর নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট ভাবে সংবিধানের কিছুই বলা হয়নি। মার্কিন রাষ্ট্রপতি দুই বারের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না। 


জর্জ ওয়াশিংটন এবং ট্মাস জেফারসন তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে অস্বীকার করলে তখন গড়ে ওঠে যে এক ব্যক্তি দুই বারের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে রুজভেল্ট ১৯৪০ সালে তৃতীয় বারের জন্য এবং ১৯৪৪ সালে চতুর্থবারের জন্য রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।

১৮২৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি মেয়াদকাল ৬ বছর করা হয়েছিল এবং ১৫০ টি প্রস্তাব উপস্থিত করা হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তীব্র বিরোধিতা করার জন্য এই প্রস্তাবটি বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। তাই বর্তমানে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ চার বছর করা হয়েছে। এবং কেউ দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে আসন গ্রহণ করতে পারবেন না।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয় ইলেক্ট্ররাল কলেজের মাধ্যমে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয় প্রতি লিপিয়ার বর্ষের নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারে পর যে প্রথম মঙ্গলবার আসে সেদিন ইলেক্ট্ররাল কলেজ বা নির্বাচক সংস্থার মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর ডিসেম্বরের প্রথম বুধবারের পর যে সোমবার আসে সে সোমবারে প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিগণ নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মিলিত হয় এবং গোপনে ভোট দান পদ্ধতি অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোট প্রদান করে থাকে।

১৯৬৪ সালের সংবিধানে ৩২ তম সংশোধনের ফলে প্রতিনিধিগণ নিজ নিজ জেলায় উপস্থিতি হয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ভোট বক্স গুলোকে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়। তার পরের বছর ৬ জানুয়ারিতে বক্সগুলোর ব্যালেট পেপার গণনা করার ফলে, ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ইলেক্ট্ররাল ভোটের সংখ্যা কত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা প্রজাতান্ত্রিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি চার বছরের জন্য একটি নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এই নির্বাচন সংস্থাকে ইলেক্ট্ররাল কলেজ বলা হয়। ইলেক্ট্ররাল কলেজের সদস্যগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিয়ে থাকে।

 ইলেক্ট্ররাল কলেজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পূর্বে গঠিত হয় এবং অঙ্গরাজ্যের নির্বাচিত সদস্যদের কে নিয়ে গঠিত হয়  ইলেক্ট্ররাল কলেজ। পরবর্তীতে এই সংস্থার মাধ্যমেই মার্টিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের ব্যবস্থা করা হয়।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি একটি জটিল প্রক্রিয়া অতিক্রম করে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এই নির্বাচনে সাধারণ জনগণ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। সংবিধান অনুসারে প্রতিটি অঙ্গরাজের নাগরিকদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে হয়। একটি নির্বাচনী সংস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে থাকে।


রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য গঠিত এই  নির্বাচনী সংস্থাটিকে বলা হয় ইলেক্ট্ররাল কলেজ। নির্বাচন সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সের প্রত্যেক নাগরিক অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য থেকে কংগ্রেসের যত সংখ্যক সদস্য নির্বাচিত হন, সময় সংখ্যক সদস্যকে অঙ্গরাজ্যের নির্বাচকমন্ডলী এর নির্বাচন সংস্থা নির্বাচিত করে।

বর্তমানে ইলেক্ট্ররাল কলেজের সদস্য সংখ্যা ৫৩৮ জন। যার মধ্যে প্রতিনিধি সভার সদস্য  ৪৩৫ জন। সিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০০ জন। মার্কিন কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ওয়াশিংটন ডিসি থেকে সদস্য সংখ্যা ৩ জন। প্রার্থীদের মধ্যে যে ২৭০ ভোট পাবেন সেই হবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্যতা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্যতার প্রসঙ্গে মার্কিন সংবিধানের দুই নং ধারায় আলোচনা করা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হতে হলে তাকে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদে যে প্রার্থী হবেন তাকে অবশ্যই জন্ম সূত্র অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। এবং তাকে অন্তত ১৪ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। রাষ্ট্রপতি পদে যে প্রার্থী হবেন তার বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি অপসারণ 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি শাসন বিভাগের আনুষ্ঠানিক এবং প্রকৃত প্রধান। কার্যকালের মধ্যে তার বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি ও ফৌজদারী মামলা করা যায় না। এমনকি তার বিরুদ্ধে আদালতে কোনো মামলা উপস্থাপন করা যায় না। তাই রাষ্ট্রপতি কার্যকালের মধ্যে একমাত্র অভিশংসন ছাড়া তাকে কোনো ভাবেই অপসারণ করা যায় না।

মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে নানা কারণের জন্য অপসারণ করা হয়ে থাকে। যে সকল কারণের জন্য অপসারণ করা হয় সেগুলো হলঃ রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা বিশ্বাসঘাতকতা জন্য,উৎকোচ গ্রহণ, সংবিধান লঙ্ঘন করার জন্য, বিধি বহির্ভূক্ত কাজ করার জন্য এবং ঘোরতর কোন অপরাধের জন্য ইত্যাদি।


মার্কিন রাষ্ট্রপতি মেয়াদকাল চার বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু হলে বা মার্কিন রাষ্ট্রপতি তাঁর পদ ত্যাগ করলে করলে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে একমাত্র রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে ক্ষমতা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

দেশদ্রোহিতা উৎকোচ গ্রহণ কিংবা অন্যান্য দুর্নীতি মূলক বা বেআইনি কাজের জন্য কার্যকাল শেষ হওয়ার আগের রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে বহিষ্কার করা যায়। এইভাবে বহিষ্কার করতে হলে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভাতে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ উপস্থাপন করতে হবে।

উচ্চকক্ষ সিনেটে সে অভিযোগ বিচার করবে।। এই সময় সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সিনেটে উপস্থিতি সদস্যদের অত্যন্ত দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য অভিযোগটি অনুমোদন করলে রাষ্ট্রপতি পদচ্যুত হবেন।

১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রপতি নিক্সন ইমপিচমেন্টের ভয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতির কার্যকলাপের জন্য একমাত্র অভিশংসন বা ইমপিচমেন্ট ছাড়া তাকে অন্য কোনভাবেই বা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলেও তা কার্যকর হবে না।

এই অপসারণ পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই এ পদ্ধতিকে আধা বিচার বিভাগীয় পদ্ধতি ও বলা যেতে পারে।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির নাম কি

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রতির দায়িত্বে আছেন জো বাইডেন। তিনি ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে বর্তমান পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। রাষ্ট্রপতির বাসভবনের নাম হোয়াইট হাউস, ওয়াশিংটন ডি.সি। মার্কিন রাষ্ট্রপতির বার্ষিক বেতন $৪,০০,০০০।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান গঠন করা হয় ৪ মার্চ ১৭৮৯ সালের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন ডি.সি।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় সম্মানিত পাঠক এ আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করে দিবেন।
* ধন্যবাদ*


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ওয়ার্ল্ডস টুয়েন্টিফোরের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url